আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের গেরিলা প্রশিক্ষণ প্রদান এবং দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার অভিযোগে করা পৃথক দুই মামলায় সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া মেজর মো. সাদিকুল হক ও তার স্ত্রী সুমাইয়া তাহমিদ যাফরিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসান শাহাদাত এই আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিন মেজর সাদিককে ভাটারা থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এবং তার স্ত্রী যাফরিনকে গুলশান থানার মামলায় আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন জানায় ডিবি পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মেজর সাদিকের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, তিনি ‘অপারেশন ঢাকা ব্লকেড’-এর প্রধান প্রশিক্ষক ও কানেক্টর হিসেবে কাজ করছিলেন। গত ৩ ও ৮ জুলাই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা সংলগ্ন কেবি কনভেনশন হলে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ৩০০-৪০০ নেতাকর্মীকে তিনি সরাসরি গেরিলা প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ করান। এছাড়া রূপগঞ্জের পূর্বাচল সি-সেল রিসোর্ট পূর্বাচল নামক রিসোর্টে, কাটাবনের একটি রেস্টুরেন্ট, মিরপুর ডিওএইচএসসহ উত্তরায় ১২ নং নম্বর সেক্টর, আঞ্চলিক পাসপোর্টের বিপরীতে প্রিয়াংকা সিটিতে ২নং গেইট সংলগ্ন তার স্ত্রী সুমাইয়া যাফরিনসহ তার নিজের উত্তরার ফ্ল্যাটেও তিনি একাধিকবার এই গোপন প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, সিসিটিভি ফুটেজ ও গ্রেফতারকৃতদের জবানবন্দি অনুযায়ী মেজর সাদিক নেতাকর্মীদের গোপন কোড প্রদান, ছদ্মনাম তৈরি এবং সিগন্যাল, গুগল ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে নির্দেশনা দিতেন। তিনি ছিলেন এই পরিকল্পনার ‘মাস্টারমাইন্ড’। তাদের পরিকল্পনা ছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশ থেকে ঢাকায় এসে শাহবাগ মোড় দখল করা এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা।
সুমাইয়া তাহমিদ যাফরিনের রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, তিনি এই নিষিদ্ধ সংগঠনের অন্যতম অর্থ জোগানদাতা, পরামর্শদাতা ও নির্দেশদাতা হিসেবে সক্রিয়। গত ২২ এপ্রিল গুলশান-১ এলাকায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের ব্যানারে রাষ্ট্রবিরোধী বিক্ষোভ মিছিল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টার পেছনে তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ও অর্থায়নের তথ্য পাওয়া গেছে। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের উৎস খুঁজতে তাকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর সামরিক আদালত থেকে মেজর সাদিককে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। কারাভোগের মধ্যেই তাকে এই নাশকতার মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো। অন্যদিকে, গত ১৩ জুলাই ভাটারা থানায় এবং ২২ এপ্রিল গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দুটি দায়ের করেছিল পুলিশ।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.