থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে বলে আজ শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা।

গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়েছে, দুই পক্ষই সব ধরনের সেনা চলাচল স্থগিত রাখতে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী বেসামরিক মানুষদের নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিতে সম্মত হয়েছে।

এর ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা তীব্র সীমান্ত সংঘর্ষ বন্ধ হলো। এই সংঘর্ষে অন্তত ৪১ জন নিহত এবং প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শনিবার দুপুর ১২টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। টানা ৭২ ঘণ্টা যুদ্ধবিরতি বজায় থাকলে থাইল্যান্ডের হেফাজতে থাকা ১৮ জন কম্বোডীয় সেনাকেও মুক্তি দেওয়া হবে।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েক দিন ধরে চলা আলোচনা শেষে এই অগ্রগতি এলো। আলোচনার লক্ষ্য ছিল দুই দেশের মধ্যে নতুন করে শুরু হওয়া সংঘর্ষের অবসান ঘটানো।

যৌথ বিবৃতিতে ‘উত্তেজনা প্রশমন’-এর শর্তগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বেসামরিক মানুষ, বেসামরিক স্থাপনা ও অবকাঠামো, পাশাপাশি উভয়পক্ষের সামরিক লক্ষ্যবস্তুর ওপর সব ধরনের হামলা বন্ধ করা।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘উসকানি ছাড়া গোলাবর্ষণ, কিংবা এক পক্ষের অবস্থান বা সেনাদের দিকে অগ্রসর হওয়া বা সেনা চলাচল—এ ধরনের যেকোনো পদক্ষেপই দুই পক্ষকে এড়িয়ে চলতে হবে।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, থাইল্যান্ডের হেফাজতে থাকা ১৮ জন কম্বোডীয় সেনার মুক্তি ‘কুয়ালালামপুর ঘোষণার নীতি অনুযায়ী’ সম্পন্ন করা হবে। এই ঘোষণা দুই দেশের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তির অংশ, যা গত অক্টোবরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে সই হয়েছিল।

চলতি মাসের শুরুতেই নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হলে সেই যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে যায়। এর পর থেকে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার জন্য দুই পক্ষই একে অপরকে দায়ী করে আসছে।

থাই সেনাবাহিনী জানায়, থাইল্যান্ডের উবন রাচাথানি প্রদেশে কম্বোডিয়ার গোলাবর্ষণের জবাবে তাদের সেনারা পাল্টা ব্যবস্থা নেয়। এতে একজন থাই সেনা নিহত হন।

কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, প্রেহ ভিহিয়ার প্রদেশে প্রথমে থাই বাহিনীই হামলা চালায়। তারা দাবি করেছে, কম্বোডিয়া পাল্টা হামলা চালায়নি।

ডিসেম্বরজুড়েই সংঘর্ষ চলতে থাকে। শুক্রবার থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার একটি বিরোধপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় বিমান হামলা চালায়।

থাই বিমানবাহিনী জানায়, বেসামরিক লোকজন এলাকা ছেড়ে যাওয়ার পর তারা কম্বোডিয়ার একটি ‘সুরক্ষিত সামরিক অবস্থানে’ হামলা চালিয়েছে। তবে কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, এসব হামলা ছিল বেসামরিক ঘরবাড়ির ওপর ‘নির্বিচার আক্রমণ’।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সীমান্ত বিরোধের ইতিহাস শতাব্দীরও বেশি পুরোনো। তবে চলতি বছরের মে মাসে এক সংঘর্ষে এক কম্বোডীয় সেনা নিহত হওয়ার পর উত্তেজনা নতুন করে বেড়ে যায়।

দুই মাস পর জুলাইয়ে সীমান্তজুড়ে টানা পাঁচ দিন তীব্র লড়াই চলে। এতে বহু সেনা ও বেসামরিক মানুষ নিহত হন এবং আরও হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

মালয়েশিয়া ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের পর দুই দেশের মধ্যে একটি নড়বড়ে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হয় এবং অক্টোবরের শেষ দিকে তা সই হয়।

ট্রাম্প এই চুক্তির নাম দেন ‘কুয়ালালামপুর শান্তি চুক্তি’। এতে বিরোধপূর্ণ এলাকা থেকে উভয় পক্ষের ভারী অস্ত্র প্রত্যাহার এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি অস্থায়ী পর্যবেক্ষক দল গঠনের নির্দেশনা ছিল।

তবে নভেম্বর মাসে থাইল্যান্ড এই চুক্তি কার্যত স্থগিত করে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী অনুতিন চার্নভিরাকুল বলেন, নিরাপত্তা হুমকি ‘বাস্তবে কমেনি’।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.