এ বছর সব করদাতাকে অনলাইনে রিটার্ন জমা দিতে হবে। প্রথমবারের মতো সব করদাতার জন্য এমন অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করায় অনেক করদাতা বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে যাঁরা বয়স্ক করদাতা, তাঁদের অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার মতো প্রযুক্তিজ্ঞান কম।
এ বিষয়ে কথা হয় উত্তরার ব্যবসায়ী মকবুল হাসানের সঙ্গে। ৬০ বছর বয়সী এই করদাতা ই-রিটার্ন দেওয়া জমা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন। কারণ, অনলাইনে রিটার্ন জমা দেওয়ার মতো প্রযুক্তিজ্ঞান তাঁর নেই।
উত্তরার ব্যবসায়ী মকবুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিবছর কর কার্যালয়ে গিয়ে রিটার্ন দিতাম। এবার অনলাইনে দিতে হবে। কিন্তু আমি অনলাইনে কীভাবে জমা দেব, তা জানি না।’ এ বছর প্রথমবারের মতো এমনভাবে রিটার্ন দেওয়া চালু করায় পরিবারের অপেক্ষাকৃত নবীন সদস্যরা প্রযুক্তিজ্ঞান ভালো থাকলেও তাঁরা পুরোপুরি বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছেন না। অপেক্ষাকৃত বয়োজ্যেষ্ঠদের ছাড় দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।
মকবুল হাসানের মতো এমন শত শত করদাতা এখন বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে বয়োজ্যেষ্ঠ ও জেলা-উপজেলার করদাতারা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এনবিআরের উদ্যোগ
অনলাইনে ই-রিটার্ন জমায় সহায়তা করার জন্য প্রতিটি কর অঞ্চলে একটি করে সহায়তা বুথ চালু করা হয়েছে।
আজ সকালে সেগুনবাগিচার কর অঞ্চল-১১ এবং অন্য কার্যালয়গুলো ঘুরে দেখা গেছে, বুথগুলো থাকলেও করদাতা নেই। আবার কয়েকটি সহায়তা বুথে দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মীকে দেখা যায়নি।
বেলা এগারোটার দিকে সেগুনবাগিচার কর অঞ্চল-১১ ই-রিটার্ন বুথে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। পাশের বুথের অন্য কর্মীর কাছ থেকে জানা গেল, সহায়তাকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছুটিতে আছেন। ওই অঞ্চলের কর কার্যালয়ের ই-রিটার্ন বুথগুলোতে কোনো সেবাপ্রার্থী দেখা যায়নি।
জানা গেছে, ই-রিটার্ন বুথে গেলে যেকোনো করদাতার অনলাইনে রিটার্ন দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন। এ জন্য আয়ের প্রমাণপত্র, ছবি, কর শনাক্তকরণ নম্বরের ফটোকপিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যেতে হবে। তবে করদাতার এমন একটি মোবাইল নম্বর থাকতে হবে, যা জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে কেনা হয়েছে। তা না হলে অনলাইনে রিটার্ন দিতে পারবেন না।
সব করদাতাকে রিটার্ন দিতে হলে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে জমা দিতে হবে। এ জন্য প্রথমে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন নিয়ে পাসওয়ার্ড দিয়ে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আপনি আপনার রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
পাঁচ ধরনের করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা থেকে ছাড় দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ ছাড়া অন্য সব করদাতার অনলাইনে রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক।
যে পাঁচ শ্রেণির করদাতাকে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দেওয়া থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের প্রবীণ করদাতা, শারীরিকভাবে অসমর্থ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন করদাতা, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি করদাতা, মৃত করদাতার পক্ষে আইনগত প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিক। তবে তাঁরা চাইলে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।
কীভাবে কর পরিশোধ করবেন
করদাতারা ব্যাংক ট্রান্সফার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, বিকাশ, রকেট, নগদ অথবা অন্য কোনো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস অ্যাপ ব্যবহারে ঘরে বসেই কর পরিশোধ করে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারেন, তাৎক্ষণিকভাবে নিজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-রিটার্ন দাখিলের রসিদ প্রিন্ট নিতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখপূর্বক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়কর সনদ প্রিন্ট করতে পারেন।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.