সিরামিক রপ্তানিতে সুযোগ বাড়াতে যৌক্তিক প্রস্তাবের আহ্বান বাণিজ্য উপদেষ্টার

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন রপ্তানির খাত হিসেবে সিরামিক শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে ব্যবসায়ীদের প্রতি বাস্তবসম্মত প্রস্তাব নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শুধু অভিযোগ নয়, বরং যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব নিয়ে আসুন। সরকার আপনাদের সহায়ক। আপনাদের সুবিধা দিতে বাধ্য। তবে সেটি হতে হবে ন্যায়সঙ্গত যুক্তি ও মানসম্পন্ন শিল্প-আচরণের ভিত্তিতে।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) চার দিনব্যাপী সিরামিক এক্সপো বাংলাদেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ) এই মেলার আয়োজন করে। মেলা চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। সিরামিক এক্সপোতে বাংলাদেশসহ ২৫টি দেশ থেকে ১৩৫টি প্রতিষ্ঠান ও ৩০০ ব্র্যান্ড অংশ নিয়েছে। পাশাপাশি এ খাতের ৫০০ জন আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি ও ক্রেতা অংশ নিয়েছেন।

বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের পরিবর্তিত রাজনীতি প্রমাণ করেছে– অতীতের মতো ‘সংযোগনির্ভর ব্যবসা’ আর চলবে না। সময় এখন দক্ষতা, যোগ্যতা ও প্রযুক্তির।

পোশাক খাত মাত্র এক যুগে বড় রপ্তানিখাতে পরিণত হলেও সিরামিক খাত কেন পারছে না এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, সিরামিক কেন সেই অবস্থায় যেতে পারছে না? কারণ আমাদের এখনো টেকসই খরচ-প্রতিযোগিতা, ডিজাইন নবায়ন, লজিস্টিক দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমাদের এগুলো চিহ্নিত করে বাস্তবসম্মত সমাধানে যেতে হবে। চলুন একসঙ্গে উদ্ভাবন করি, বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আমাদের শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাই।

সিরামিক খাতে গ্যাস সংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে গ্যাস সংকট নিয়ে আমরা অনেক বিতর্ক শুনি। কিন্তু বাস্তবে সরকার যে এই সংকট মোকাবিলায় সফল হয়েছে, তা আমরা স্বীকার করতে চাই না। আজ এখানে উপস্থিত আমাদের সম্মানিত সভাপতি ব্যক্তিগতভাবে দীর্ঘদিন গ্যাস সংকটে ভুগেছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এখন পরিস্থিতি কেমন? তিনি বলেন, আগের মতো আর সমস্যা নেই। অর্থাৎ আমরা যে উন্নতি দেখছি, তা হঠাৎ করে ঘটেনি। এটি এসেছে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও কার্যকর কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে। তাই এই সাফল্য আমরা স্বীকৃতি না দিলে সমস্যার সমাধানও সম্ভব হবে না।

বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, স্বাধীনতার পর দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ধীরে ধীরে শিল্পটিকে বহুগুণ সম্প্রসারণ করে। আজ এই খাত উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে, কিন্তু এখন আমাদের নিজেকে নিজেদের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত; কেবল টিকে থাকা নয়, বাজারে উৎকর্ষতা অর্জন করা।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকায় নিযুক্ত ইতালির রাষ্ট্রদূত আন্তোনিও আলেসান্দ্রো বলেন, ৮ কোম্পানি এই মেলায় অংশ নিয়েছে। পোশাক খাতের বাইরেও বাংলাদেশে নজর দিতে পারে। সেক্ষেত্রে সিরামিক খাত ভালো বিকল্প হতে পারে। বাংলাদেশের সিরামিক খাতের উন্নয়নে ইতালি সাহায্য করতে পারে। প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আদান-প্রদান করতে পারে দুটি দেশ।

বিসিএমইএ সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, সিরামিক খাত বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পেলে পোশাক খাতের মতো আমরাও বড় খাত হতে পারি। আমাদের দুটি দিকে নজর দেওয়া উচিত। একটি হলো নীতিসহায়তা, আরেকটি পর্যাপ্ত জ্বালানির নিশ্চয়তা। জ্বালানি এই খাতের লাইফলাইন। আমাদের নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রয়োজন।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, বৈশ্বিক বাজারে আমাদের পণ্য নিয়ে যেতে হবে। আগামীতে গ্লোবাল সোর্সিং এক্সপোর আয়োজন করছি। আশা করছি বিসিএমইএ আগামীতে বৈশ্বিক সিরামিক এক্সপোর আয়োজন করবে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.