দিল্লিতে অজিত দোভালের সঙ্গে নিরাপত্তা উপদেষ্টার বৈঠক

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। তবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার বিষয়ে বিস্তারিত জানায়নি বাংলাদেশের হাইকমিশন।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) নয়াদিল্লিতে ড. খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (সিএসসি) সপ্তম এনএসএ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও তার টিমের সঙ্গে এ বৈঠক করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি কোনো উপদেষ্টার দ্বিতীয় ভারত সফর। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে ‘ইন্ডিয়া এনার্জি উইক’- এ অংশ নিতে দিল্লি যান জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের মধ্যে বৈঠক দুই দেশের কূটনৈতিক যোগাযোগে নতুন গতি দেয়। তারই ধারাবাহিকতায় গত ডিসেম্বরে ঢাকায় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীকালে এপ্রিলে ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়। এছাড়া, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মহাপরিচালক পর্যায়ের সম্মেলন, যৌথ নদী কমিশনের কারিগরি বৈঠক এবং কনস্যুলার সংলাপসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আনুষ্ঠানিক যোগাযোগও হয়েছে।

দিল্লির বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে সিএসসির কার্যক্রম এবং দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বৈঠকে অজিত দোভালকে তার সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তবে আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আর কিছু জানানো হয়নি।

বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) দিল্লিতে পাঁচটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (সিএসসি) সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।গত বছরের জুনে বাংলাদেশ পঞ্চম দেশ হিসেবে সিএসসিতে যুক্ত হয়। এই সম্মেলনে পাঁচ দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠকে ড. খলিলুর রহমান যোগ দিবেন।

প্রসঙ্গত, কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ হচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি বহুপক্ষীয় আঞ্চলিক নিরাপত্তা ফোরাম। এই ফোরামের সদস্যদেশগুলো হলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মরিশাস ও বাংলাদেশ। আর সেশেলস পর্যবেক্ষক হিসেবে যুক্ত আছে। গত বছর এই কনক্লেভের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে। তাতে অংশ নেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, মালদ্বীপের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লে. কর্নেল (অব.) ইব্রাহিম লতিফ, শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মরিশাসের হাই কমিশনার হেইম্যানডোয়াল ডিলাম এবং শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সাগালা রত্নায়েক।

গত বছর সিএসসি সচিবালয় প্রতিষ্ঠায় একটি সমঝোতা স্মারকে সই করা হয়। সিএসসি-এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সাধারণ উদ্বেগের অন্তর্ভুক্ত আন্তঃসীমান্তবর্তী হুমকি ও প্রতিরোধগুলোকে মোকাবিলা করে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে উন্নীত করা। এর অধীনে পাঁচটি সহযোগিতার স্তম্ভ আছে- সামুদ্রিক নিরাপত্তা; সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবিলা; পাচার এবং আন্তঃসীমান্ত সংগঠিত অপরাধ মোকাবিলা; সাইবার নিরাপত্তা এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও প্রযুক্তির সুরক্ষা; এবং মানবিক সহায়তা ও দুর্যোগ মোকাবিলা।

সিএসসি সপ্তম সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের বুধবার দিল্লি যাওয়ার কথা থাকলেও হঠাৎ পরিবর্তিত সূচিতে তিনি মঙ্গলবারই ভারতের রাজধানীতে পৌঁছান। তার সফরসূচিতে এমন পরিবর্তন কূটনৈতিক মহলে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এ সফরকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং তার দিল্লিতে আশ্রয়-সংক্রান্ত ইস্যু দুই প্রতিবেশী দেশের সম্পর্ককে নতুন আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.