ইস্টার্ন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব তলব

ইস্টার্ন ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী চৌধুরী ও তার পরিবারের ব্যক্তিগত এবং ব্যাংক হিসাবে নথিপত্র তলব করে ইস্টার্ন ব্যাংক ও মিডল্যান্ড ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সম্প্রতি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান এ সংক্রান্ত নথিপত্র তলব করেছেন।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

শওকত আলীর বিরুদ্ধে ১৪৬ ব্যাংক হিসাবে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি সন্দেহভাজন লেনদেনসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।

যেসব রেকর্ডপত্র তলব করা হয়েছে—
চিঠিতে শওকত আলী চৌধুরী এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে বা তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক হিসাব খোলার ফর্মসহ রেকর্ডপত্র, লেনদেন বিবরণী, জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন, পাসপোর্ট ইত্যাদির কপি তলব করা হয়েছে।

এ ছাড়া নিজ ও তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ঋণের আবেদন, শাখার প্রস্তাব এবং অনুমোদনসংক্রান্ত সব রেকর্ডপত্র ও ঋণ হিসাব বিবরণী চেয়েছে দুদক। রেকর্ডপত্র আগামী ০৭ কার্যদিবসের মধ্যে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।

দাখিল করা অভিযোগ ও বিএফআইইউ’র গোয়েন্দা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. শওকত আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান তাসমিয়া আম্বারীন, মেয়ে জারা নামরীন ও ছেলে জারান আলী চৌধুরী—চারজনের এখন পর্যন্ত ২৮টি ব্যাংকে ১৮৭টি হিসাব পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে শওকত আলীর নামে ১৪টি, তার স্ত্রীর নামে ১৫টি, জারা নামরীনের নামে ৯টি, মো. জারান আলী চৌধুরীর নামে ৩টি এবং তাদের স্বার্থ–সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে ১৪৬টি হিসাব পাওয়া গেছে।

২০২৫ সালের ১৫ জুন পর্যন্ত এসব হিসাবে জমা হয়েছে ৮ হাজার ৪০৭ কোটি ৯১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৮২.২২ টাকা, উত্তোলন হয়েছে ৮ হাজার ২৪৭ কোটি ৫৬ লাখ ৯২ হাজার ৭৬০.৩১ টাকা, আর স্থিতি ছিল ১ হাজার ৭৩ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার ১৫৮ টাকা।

হিসাবগুলোর মধ্যে শওকত আলীর ঢাকা ব্যাংকের জুবিলী রোড শাখায় পরিচালিত প্লাটিনাম হিসাবটি ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি খোলা হয় এবং ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর বন্ধ হয়। সেখানে মোট জমা ছিল ৩ হাজার ৯৮৭ কোটি ৯৬ লাখ ৩ হাজার ২৭৪ টাকা, উত্তোলন ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি ২৩ লাখ ২ হাজার ৮৩৫ টাকা, আর বন্ধকালীন স্থিতি ছিল ১৭ লাখ ৩০ হাজার ৪৩৯ টাকা। এই হিসাব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এসএন কর্পোরেশনের লেনদেনে ব্যবহার করা হয়েছে বলে বিএফআইইউ মনে করছে, যা পরোক্ষভাবে ট্যাক্স ফাঁকির উদ্দেশে হয়ে থাকতে পারে।

এ ছাড়া শওকত আলী চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে সিঙ্গাপুর, দুবাই ও যুক্তরাজ্যে সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরে দুটি বাড়ির তথ্য পাওয়া গেছে।

গত ৩০ জুন শওকত আলী চৌধুরী ও তার পরিবারের সদস্যদের সব ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বিএফআইইউ। এখন পর্যন্ত এসব হিসাব জব্দ অবস্থায় রয়েছে।

শওকত আলী চৌধুরীর সঙ্গে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এবং পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফত–এর সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের তথ্যও পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.