চলতি বছরের শেষে বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে পদত্যাগ করবেন ওয়ারেন বাফেট। এ খবর বেশ পুরোনোই। এবার বাফেট জানিয়েছেন, অবসর নেওয়ার পর অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যাবেন তিনি। সঙ্গে এ–ও জানিয়েছেন, এখনই কোম্পানির সংস্রব ত্যাগ করছেন না তিনি।
প্রতিবছর বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএমের সময় বার্কশায়ারের শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে চিঠি দেন মাননীয় ওয়ারেন বাফেট। সেই ১৯৬৫ সাল থেকে এ রীতি চলে আসছে। এবারও তার ব্যত্যয় হয়নি। এবার শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে তিনি এ কথা বলেছেন।
বাস্তবতা হলো, অবসর নেওয়ার পর বার্ষিক প্রতিবেদনের শুরুতে ওয়ারেন বাফেটের লেখা চিঠি আর থাকবে না। কিন্তু শেয়ারহোল্ডারদের ধন্যবাদ জানিয়ে বছরে একবার চিঠি তিনি লিখবেন। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, দানধ্যানের গতি আরও বাড়াবেন। এখনো বার্কশায়ারের ১৪৯ বিলিয়ন বা ১৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের শেয়ার তাঁর হাতে। সেই শেয়ার দান করা অব্যাহত রাখবেন তিনি।
ওরাকাল অব ওমাহা বা ওমাহার জাদুকর হিসেবে খ্যাত মাননীয় ওয়ারেন বাফেট বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগ গুরু হিসেবে পরিচিত। জীবনযাপনেও তিনি সাধারণ। মানুষ তাঁকে আপন মনে করে। তবে স্টক মার্কেটের বিষয়ে তিনি কী বলছেন বা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, সারা বিশ্বের বিনিয়োগকারীরা সেদিকে তাকিয়ে থাকেন।
আগামী বছর বার্কশায়ারের প্রধান নির্বাহী হিসেবে বাফেটের স্থলাভিষিক্ত হবেন গ্রেগ আবেল। আবেল বর্তমানে কোম্পানির বিমা ব্যতীত অন্যান্য কার্যক্রমের ভাইস চেয়ারম্যান। সেই ২০২১ সালেই আবেলকে পরবর্তী নেতৃত্ব হিসেবে মনোনীত করা হয়। এখন তাঁর বয়স ৬৩ বছর।
শেয়ারহোল্ডারদের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে বাফেট আবেলের প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, আবেলের কাছে তাঁর যে প্রত্যাশা ছিল, আবেল তার চেয়ে বেশি দিয়েছেন। নিজের স্বাস্থ্যের কথাও বলেছেন বাফেট। চলাফেরা ও পড়ার ক্ষেত্রে সমস্যা থাকলেও তিনি এখনো সপ্তাহে পাঁচ দিন অফিস করেন।
তবে এই নবতিপর বৃদ্ধের বয়স কমছে না, সে বিষয়েও তিনি সচেতন। নিজের বিপুল সম্পদ তিনি দান করে দিতে চান। এর মধ্যে আরেকটি দানের কথাও শেয়ারহোল্ডারদের জানিয়ে দিয়েছেন। ১৩৫ কোটি ডলার মূল্যের ১ হাজার ৮০০ শেয়ার বি শ্রেণির শেয়ারে রূপান্তরিত করে পরিবারের চারটি ফাউন্ডেশনে দান করেছেন।
নিজের মনোনীত ট্রাস্টিরা থাকতে থাকতে আরও দান করতে চান বাফেট। নতুন ট্রাস্টিরা এলে তাঁদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে, সে কারণে নিজের জীবদ্দশায় তিনি দানের গতি বাড়াতে চান। অর্থাৎ বর্তমান ট্রাস্টিরা থাকতে থাকতে পছন্দমতো সম্পদ দান করতে চান।
অবসরে যাওয়ার পর বার্কশায়ার ভালো করবে বলেই মনে করেন মাননীয় ওয়ারেন বাফেট। ছয় দশক ধরে তিলে তিলে যে সাম্রাজ্য তিনি গড়ে তুলেছেন, তার বিষয়ে বাস্তবসম্মত উচ্চ প্রত্যাশা আছে। চলতি বছর বার্কশায়ারের শেয়ারের দর ১০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। কোম্পানির বাজার মূলধন এক ট্রিলিয়ন বা এক লাখ কোটি ডলারের বেশি।
চিঠিতে বাফেট বার্কশায়ারের ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, বার্কশায়ারের বিভিন্ন কোম্পানির ব্যবসা অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে কিছুটা ভালো হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বার্কশায়ারের হাতে বেশ কিছু বড় ব্যবসা আছে, যেগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটি যুক্ত নয়।
আগামী ১০ থেকে ২০ বছরে অন্যান্য কোম্পানি বার্কশায়ারের চেয়ে ভালো করবে বলেও মনে করেন বাফেট। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বার্কশায়ার এমনিতে অনেক বড়। ধীরে ধীরে তার প্রবৃদ্ধির গতি কমে আসবে। তখন অন্যান্য কোম্পানি উঠে আসবে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.