বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে সিআইডি

রফতানির আড়ালে প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশে পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমানসহ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের করা ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রবিবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি ছিগবাত উল্লাহ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট তদন্তে জানতে পারে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের অধীনে থাকা ১৭টি করপোরেট প্রতিষ্ঠান বৈদেশিক বাণিজ্যের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে- অ্যাডভানস গার্মেন্টস, অ্যাপোলো এপারেলস, অটোম্যান লুপ এপারেলস, বিক্সটেক্স গার্মেন্টস, কসমোপলিটান এপারেলস, কজি এপারেলস, ইসেস ফ্যাশন ইন্টারন্যাশনাল, কাচপুর এপারেলস, মিড ওয়েস্ট গার্মেন্টস, পিয়ারলেস গার্মেন্টস, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস, প্লাটিউর গার্মেন্টস, স্কাইনেট এপারেলস, ইস্প্রিংফুল এপারেলস, আরবান ফ্যাশন ও উইন্ট্রা ইস্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড।

তদন্তে দেখা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনতা ব্যাংক পিএলসি’র মতিঝিল শাখা থেকে এলসি খোলা হলেও রফতানির বিপরীতে অর্জিত অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়নি। বরং অর্থ পাঠানো হয়েছে দুবাইয়ের আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও আয়ারল্যান্ডে।

সিআইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আর আর গ্লোবাল ট্রেডিং’ প্রতিষ্ঠানের মালিকানা রয়েছে সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের নামে।

২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে রফতানির বিপরীতে দেখানো ৯৬,৯৬,৬৮০ মার্কিন ডলার দেশে ফেরত আনা হয়নি— অর্থাৎ রফতানিমূল্য প্রত্যাবসন না করে তা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এই ঘটনায় ২০২৪ সালের ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর মতিঝিল থানায় মোট ১৭টি মানিলন্ডারিং মামলা দায়ের করে সিআইডি। পরবর্তীতে তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অনুমোদন চাওয়া হলে সম্প্রতি তা অনুমোদন দেওয়া হয়।

আদালতের আদেশে ইতোমধ্যেই আসামিদের বিভিন্ন সম্পদ ক্রোক করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা জেলার দোহার থানার প্রায় ২ হাজার শতক জমি ও স্থাপনা, গুলশানের ‘দ্য এনভয় বিল্ডিং’-এর ৬,১৮৯.৫৪ বর্গফুট ফ্ল্যাট, গুলশান আবাসিক এলাকার ৬৮/এ রোডের ৩১ নম্বর প্লটে অবস্থিত ২,৭১৩ বর্গফুটের ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট। এছাড়া আসামিদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে এবং বিদেশ গমনেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ক্রোক করা সম্পত্তির আনুমানিক বাজারমূল্য ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা।

এই মামলাগুলোতে বেক্সিমকো চেয়ারম্যান এ এস এফ রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, আহমেদ শাহরিয়ার রহমানসহ মোট ২৮ জন ব্যক্তি ও ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এর আগে, জানুয়ারি ২০২৫ সালে বেক্সিমকোর সহযোগী প্রতিষ্ঠান অটোম্যান লুপ এপারেলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওয়াসিউর রহমানকে গ্রেফতার করে সিআইডি। বর্তমানে কারাগারে থাকা সালমান এফ রহমানকেও এই মামলাগুলোতে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট বলেছে, এটি একটি জটিল ট্রেড-বেইজড মানিলন্ডারিং তদন্ত। রাষ্ট্রের আর্থিক স্বার্থ রক্ষায় আমরা দ্রুততম সময়ে তদন্ত সম্পন্ন করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করছি।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.