রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি থাকায় কর-জিডিপি অনুপাত নিয়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।
আইএমএফের পঞ্চম রিভিউ মিশনের অংশ হিসেবে বুধবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম দফার বৈঠক শেষে এই পর্যবেক্ষণ জানানো হয়। ক্রিস পাপাজর্জিউয়ের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি আগামী ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবে। এ সময়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিস্তারিত পর্যালোচনা ও আলোচনায় বসবে।
বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কর্মকর্তারা অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপর তারা অর্থ বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি ও বাজেট অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
এসব বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধিরা ঋণচুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের রাজস্ব আহরণে ঘাটতি কেন হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চান। এই রাজস্ব ঘাটতি পূরণে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে কি না, সে বিষয়েও তারা জানতে চান।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, আইএমএফ প্রতিনিধিদল জানতে চেয়েছে, চলতি অর্থবছরের অবশিষ্ট সময়ে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে সরকার কী পদক্ষেপ নিতে চায় এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতা রাজস্ব আহরণে প্রভাব ফেলবে কি না।
চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ধীরগতি নিয়েও প্রশ্ন করেছে আইএমএফ। পাশাপাশি উন্নয়ন ব্যয় ত্বরান্বিত করতে নতুন উদ্যোগের পরিকল্পনা করা হয়েছে কি না, সে সম্পর্কেও তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি।
অর্থ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “প্রথম দিনের বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে আগামী দিনগুলোতে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে, যেখানে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হবে।”
বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক গণমাধ্যমকে বলেন, আইএমএফ দেশের রিজার্ভ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, “আইএমএফ সন্তুষ্ট যে আমাদের রিজার্ভ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রয়েছে। তাদের মানদণ্ড অনুযায়ী চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমাদের নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ বিলিয়ন ডলার এবং ডিসেম্বর মাসে সেটি ১৯ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে আমাদের নিট রিজার্ভ রয়েছে ২০.৫ বিলিয়ন ডলার।”
তিনি আরও জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আইএমএফ দলকে জানিয়েছে যে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মুদ্রাস্ফীতির প্রবণতা নিম্নমুখী। আইএমএফ প্রতিনিধিরা এই উন্নতির বিষয়টি স্বীকার করেছেন, তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে আইএমএফের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের কর-জিডিপির নিম্ন অনুপাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা একে কাঠামোগত দুর্বলতা হিসেবে উল্লেখ করেছে, যা দেশের রাজস্ব সক্ষমতাকে সীমিত করে রাখছে।
ডেপুটি গভর্নর নূরুন নাহারের সভাপতিত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চলমান সংস্কার কার্যক্রম ও ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়। আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল তারল্য-সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোর পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, ঝুঁকিভিত্তিক তদারকি বাস্তবায়ন, আমানত উত্তোলনে বিধিনিষেধ, এবং একীভূত ব্যাংকগুলোর আর্থিক স্বাস্থ্য।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.