বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অযৌক্তিক, অবিবেচনাপ্রসূত। জুলাই জাতীয় সনদের প্রস্তাবিত সুপারিশ নিয়ে প্রয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাবে বিএনপি। সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্ট উল্লেখ করা হয়নি, যা দীর্ঘ এক বছরের ধারাবাহিক আলোচনাকে অর্থহীন করার পাশাপাশি প্রহসনমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমনটি বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সালাহউদ্দিন আহমদ, নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক অধিকার আমলে নেয়নি। ঐকমত্য হওয়া কয়েকটি দফায় অগোচরে পরিবর্তন এনেছে ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের সুপারিশ জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার এখতিয়ার নেই সরকারের। কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক মতামত আমলে নেয়নি। নির্বাচনের দিন ছাড়া গণভোটের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নেবে না বিএনপি।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন ও ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের অঙ্গীকার রক্ষায় জাতি ঐক্যবদ্ধ হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা এমন এক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়তে চাই, যেখানে থাকবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতিকে বিভক্ত করার যেকোনো পদক্ষেপ অনৈক্য সৃষ্টি করবে এবং জাতীয় জীবনে অকল্যাণ ডেকে আনবে। আমরা চাই ঐক্য, প্রতারণা নয়। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একই সঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করবেন। নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক ক্ষমতা শুধু জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পর্যন্ত সীমিত। সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের কোনো এখতিয়ার তাদের নেই।
তিনি আরও বলেন, এই পরিষদ যদি ২৭০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ না করে, তাহলে সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হবে-এমন ধারণা হাস্যকর ও গণতান্ত্রিক রীতির পরিপন্থী। আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিতে বিএনপি প্রস্তাব করেছে-নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজন করা হোক। আগে গণভোট নেওয়া অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত। নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে সময়, ব্যয় ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার দিক থেকে তা যুক্তিযুক্ত।
ফখরুল বলেন, বিএনপি সংস্কার কমিশন ও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে বহু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে। আমরা সবসময়ই সংস্কারের পক্ষে। শহীদ জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা, খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এবং তারেক রহমানের ২৭ দফা-সবই প্রমাণ করে বিএনপি গণতান্ত্রিক সংস্কারে আন্তরিক।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.