তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের শান্তি আলোচনা কোনো চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়েছে, ফলে সীমান্তে সাম্প্রতিক সহিংসতার পর আবারও সংঘাতের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বিষয়টির সঙ্গে জড়িত দুটি কূটনৈতিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকের লক্ষ্য ছিল দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা। চলতি মাসে সীমান্তে সংঘর্ষে দশকের মধ্যে সর্বাধিক প্রাণহানি ঘটেছে — যেখানে পাকিস্তানি সেনা, আফগান যোদ্ধা ও সাধারণ নাগরিকসহ ডজনখানেক মানুষ নিহত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, দোহায় ১৯ অক্টোবরের যুদ্ধবিরতির পর ইস্তাম্বুলে তুরস্ক ও কাতারের মধ্যস্থতায় দ্বিতীয় দফা আলোচনায়ও কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। উভয় পক্ষই আলোচনার ব্যর্থতার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে।
একজন পাকিস্তানি নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানান, তালেবান সরকার পাকিস্তানি তালেবানকে নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজি হয়নি, অথচ এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আফগান মাটিতে নিরাপদে অবস্থান করছে বলে ইসলামাবাদ দাবি করছে।
অন্যদিকে আলোচনায় যুক্ত এক আফগান সূত্র জানায়, আলোচনায় তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়, কারণ আফগান প্রতিনিধিরা বলেন যে তারা পাকিস্তানি তালেবানের ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ রাখে না, যদিও সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ওই গোষ্ঠী পাকিস্তানি সেনাদের ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তালেবান সরকারের মুখপাত্ররা এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি।
এই মাসের শুরুতে পাকিস্তান কাবুলসহ একাধিক স্থানে বিমান হামলা চালায়, লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানি তালেবান প্রধানকে নির্মূল করা। এর জবাবে আফগান তালেবান ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে পাকিস্তানি সামরিক চৌকিতে পাল্টা হামলা চালায়।
শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে দোহা যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নজরে এসেছে।
গত শনিবার পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আফগানিস্তান শান্তি চায়, তবে ইস্তাম্বুল আলোচনায় ব্যর্থতা মানে হবে ‘উন্মুক্ত যুদ্ধ’।
যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গত সপ্তাহে সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষে ৫ পাকিস্তানি সেনা ও ২৫ পাকিস্তানি তালেবান সদস্য নিহত হয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, আলোচনার ভেঙে যাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে এবং পরমাণু-সক্ষম পাকিস্তান ও তালেবান-নিয়ন্ত্রিত আফগানিস্তানের সম্পর্ক নতুন করে সংকটে ফেলবে।
অর্থসুচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.