ইউসিবির সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট, কার্বন হিসাব প্রকাশে ব্যাংকিং খাতে নতুন মাইলফলক

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক পিএলসি (ইউসিবি) প্রথমবারের মতো প্রকাশ করেছে ‘সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট ২০২৪’, যার মাধ্যমে ব্যাংকটি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের কার্বন হিসাব (Carbon Accounting) প্রকাশ করেছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে এটি টেকসই উদ্যোগের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ব্যাংকটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রিপোর্টে ইউসিবি তাদের ঋণ ও বিনিয়োগ কার্যক্রম থেকে সৃষ্ট মোট কার্বন নিঃসরণ পরিমাপ ও প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে, যা বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে টেকসই ব্যাংকিং অনুশীলনের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সম্প্রতি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রিপোর্টটি উন্মোচন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউসিবির চেয়ারম্যান শরীফ জহীর, সঙ্গে ছিলেন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ ও সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিমের কর্মকর্তারা।

রিপোর্টে স্কোপ ৩ (Financed Emissions) অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জিম ফাউন্ডেশনের পিসিএএফ (PCAF) ভিত্তিক টেমপ্লেট ব্যবহার করে। পাশাপাশি ব্যাংকের নিজস্ব কার্যক্রম থেকে সৃষ্ট স্কোপ ১ ও ২ (প্রত্যক্ষ ও জ্বালানি-সম্পর্কিত নির্গমন) হিসাবও সীমিত আকারে যুক্ত করা হয়েছে।

ইউসিবি জানিয়েছে, ভবিষ্যতে তারা সবুজ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অর্থায়ন আরও জোরদার করবে এবং ধীরে ধীরে উচ্চ কার্বননির্ভর শিল্পে বিনিয়োগ কমাবে। পাশাপাশি ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে বিদ্যুৎ ও কাগজ ব্যবহারে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ, কার্বন ফুটপ্রিন্ট পরিমাপ ও প্রকাশ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্য কার্বন নিঃসরণে (Net Zero Emission) পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান শরীফ জহীর বলেন, “মানবজাতির অস্তিত্বের সবচেয়ে বড় হুমকি হলো বায়ুমণ্ডলে লাগামহীন কার্বন নির্গমন। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে। ইউসিবির ২০২৪ সালের সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট কেবল একটি দলিল নয়; এটি আমাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন—যেখানে আর্থিক অগ্রগতি, সামাজিক কল্যাণ ও পরিবেশ সুরক্ষা একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।”

রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইউসিবি পরিবেশ, সামাজিক ও গভর্নেন্স (ESG) নীতিমালাকে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রে রেখেছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটি গ্রিন ও সাসটেইনেবল ফাইন্যান্সিং খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি-দক্ষ প্রযুক্তি, টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ স্থাপনা ও জলবায়ু সহনশীল কৃষি উদ্যোগে অর্থায়নের মাধ্যমে ইউসিবি কৃষক ও জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় সরাসরি অবদান রাখছে।

ইউসিবির এই টেকসই উদ্যোগ কেবল পরিবেশের জন্য নয়, বরং তাদের গ্রাহক, ঋণগ্রহীতা ও শেয়ারহোল্ডারদের জন্যও সুফল বয়ে আনবে। গ্রাহকরা পাবেন স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল ব্যাংকিং সেবা, ঋণগ্রহীতারা সবুজ প্রকল্পে অর্থায়নের সুযোগ, এবং শেয়ারহোল্ডাররা নিশ্চিত হবেন যে তাদের বিনিয়োগ টেকসই ও কম-ঝুঁকিপূর্ণ খাতে ব্যবহৃত হচ্ছে।

‘সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট ২০২৪’ ইউসিবির আর্থিক স্থিতি, পরিবেশগত দায়িত্ববোধ ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.