বিদ্বেষ থেকে এনবিআরকে দুই ভাগ করা হলে ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করবে:ফরিদ উদ্দিন

এনবিআর বিলুপ্তির উদ্যোগে বিতর্ক, সমন্বয়হীনতায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় শঙ্কা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি পৃথক বিভাগে ভাগ করার সরকারের উদ্যোগ নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এ পরামর্শক কমিটির মূল সুপারিশগুলো প্রতিফলিত হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট সদস্যরা।

শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানে এনবিআর সংস্কার নিয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের (পিইবি) উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।

পরামর্শক কমিটির সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, “আমরা যে সংস্কার সুপারিশ দিয়েছিলাম, বাস্তবে তা যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। যদি কোনও বিদ্বেষ বা ভুল সিদ্ধান্ত থেকে এনবিআরকে দুই ভাগ করা হয়, তবে তা জাতির জন্য ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি করবে।”

তিনি আরও বলেন, “এখন এক জায়গা থেকে সমন্বয় করা সম্ভব হলেও পৃথক করার ফলে দ্বিগুণ জটিলতা তৈরি হবে। আপনারা প্রতিবেদনটি পড়ে মতামত দিন, যাতে সরকার সঠিক পথে হাঁটে।”

‘রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়’

কমিটির আরেক সদস্য ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, “সঠিকভাবে সুপারিশ বাস্তবায়ন মূলত রাজনৈতিক কমিটমেন্টের বিষয়। নইলে সংস্কার কেবল কাগজে-কলমেই থেকে যাবে।”

এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, “সংস্কার কমিটি ভালো কাজ করলেও আমরা জানি না এর বাস্তব ফলাফল কী হবে। হঠাৎ করে এনবিআর বিলুপ্ত করে কর্মকর্তাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত ব্যবসায়ী সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।”

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাশরুর রিয়াজ বলেন, “কমিটি যেভাবে সুপারিশ দিয়েছে, তাতে সরকারের মধ্যে বাস্তবায়নের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। পৃথকীকরণ যদি কার্যকর না হয়, তবে এক জায়গার ঝামেলা দুই জায়গায় রূপ নেবে।”

সরকার গত ১২ মে রাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে অধ্যাদেশ জারি করে। পরদিন থেকেই এনবিআর কর্মীরা আন্দোলনে নামেন। তারা দাবি তোলেন, শীর্ষ পদে যেন প্রশাসন ক্যাডারের সচিবদের বদলে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কর্মীদের প্রতিবাদের মুখে সরকার সংশোধনের আশ্বাস দেয়।

পরে সংশোধিত অধ্যাদেশে ১১টি পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়, যেখানে দুই বিভাগের শীর্ষ পদে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা হয়।

তবে পরামর্শক কমিটি ও ব্যবসায়ী সমাজের মতে, সংশোধিত প্রস্তাবেও যথেষ্ট স্বচ্ছতা নেই। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সমন্বয়ের অভাবে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় সংকট আরও গভীর হতে পারে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.