নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার করা গণহত্যার মামলায় পক্ষভুক্ত হয়েছে ব্রাজিল। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ‘জাতিগত নিধনের’ অভিযোগকে কেন্দ্র করে এই মামলা দায়ের করা হয়।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দোহা ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত শুক্রবার আদালতের এক বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে ব্রাজিল আইসিজে-র বিধি অনুযায়ী ৬৩ নম্বর অনুচ্ছেদ ব্যবহার করে মামলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, যে কোনো সদস্যরাষ্ট্র মামলায় যোগ দিতে পারে, যদি সেটি এমন কোনো আন্তর্জাতিক চুক্তির ব্যাখ্যার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, যার পক্ষভুক্ত তারা নিজেরাও। ব্রাজিল বলেছে, ইসরায়েল ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করছে।
আদালত জানিয়েছে, এখন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইসরায়েলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যেন তারা ব্রাজিলের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে লিখিত পর্যবেক্ষণ জমা দেয়।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত জুলাইয়ে জানিয়েছিল, তারা ইসরায়েলের দায়মুক্তির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে এ মামলায় যুক্ত হতে চায়। গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে ব্রাজিল বলেছে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করছে।
ব্রাজিল এখন সেই দেশগুলোর তালিকায় যুক্ত হলো, যারা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আইসিজের মামলায় অংশ নিয়েছে। ইতোমধ্যে স্পেন, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো, তুরস্কসহ আরও কিছু দেশ এই মামলায় পক্ষ নিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘ ও অন্যান্য নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই হামলাকে জাতিগত নিধন হিসেবে উল্লেখ করেছে।
আইসিজে এখনো মামলার চূড়ান্ত রায় দেয়নি। তবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে আদালত একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেয়, যাতে ইসরায়েলকে গাজায় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা এবং জাতিগত নিধন ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়।
আদালত আরও বলেছে, ইসরায়েল অবৈধভাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল করে রেখেছে এবং সেখানকার দখলদারিত্বমূলক নীতি অবলম্বন করছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
এদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সমালোচনা বাড়লেও দেশটি আইসিজের নির্দেশনা উপেক্ষা করে গাজা ও পশ্চিম তীরে আগ্রাসন জারি রেখেছে। তাদের লক্ষ্য দ্রুত ফিলিস্তিনের অধিকাংশ এলাকা দখল করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মামলার আইনি ভিত্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। মার্কিন আইনপ্রণেতারা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে হুমকি দিয়েছেন এবং আন্তর্জাতিক আদালতের প্রক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন।
এছাড়া, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে, যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্যদের ওপর নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.