পাক-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি ঘিরে পারমাণবিক জল্পনা, পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে ধোঁয়াশা

রিয়াদ-ইসলামাবাদের মধ্যে সদ্য স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা চুক্তিকে কেন্দ্র করে পারমাণবিক সহায়তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এই বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে এক টেলিভিশন টক শোতে অংশ নিয়ে খাজা আসিফ বলেন, ‘আমাদের যা আছে এবং যে সক্ষমতা আমরা আয়ত্ত করেছি, তা এই চুক্তির অধীনে (সৌদি আরবকে) দেওয়া হবে।’ এই মন্তব্যে বোঝা যাচ্ছিল, পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা—অস্ত্র ও প্রযুক্তি সহায়তা—সৌদি আরবকে দেওয়া হতে পারে।

তবে কিছুক্ষণ পরই রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খাজা আসিফ বলেন, এ চুক্তির আওতায় পারমাণবিক অস্ত্র নেই। তাঁর ভাষায়, চুক্তিতে পারমাণবিক বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত নয়।

চুক্তির বিষয়টি ঘিরে যখন জল্পনা বাড়ছে, তখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার থেকে ‘কৌশলগত নীরবতা’ অনুসরণ করতে শুরু করে। সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান চুক্তির কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি।

চুক্তি পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের পারমাণবিক নীতিতে পরিবর্তন এনেছে কি না—এই প্রশ্নের উত্তরে শাফকাত বলেন, ‘যেকোনো নীতির মতো এই নীতিও পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে এবং পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত রয়েছে।’ তবে তিনি নীতির নির্দিষ্ট বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পাকিস্তান বারবার দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি কেবলমাত্র প্রতিবেশী ভারত থেকে আসা হুমকি প্রতিহত করতেই গড়ে তোলা হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছিল, ‘আমাদের কৌশলগত কর্মসূচি এবং সম্মিলিত সক্ষমতা শুধু অস্তিত্বের হুমকি প্রতিহতের জন্য, অন্য কোনো দেশের জন্য হুমকি নয়।’

চুক্তির ফলে সৌদি আরবে পাকিস্তানের সেনা মোতায়েনের নিয়ম বদলাবে কি না—এই প্রশ্নেরও উত্তর দেননি শাফকাত আলী খান। তিনি শুধু বলেন, ‘১৯৬০-এর দশক থেকে পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি। নতুন চুক্তি সেই অংশীদারত্বকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে।’

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের আগ্রাসী পরিকল্পনা ঠেকাতেই কি এই চুক্তি করা হয়েছে—এই প্রশ্নে তিনি বলেন, চুক্তিটি প্রতিরক্ষামূলক এবং তৃতীয় কোনো দেশকে লক্ষ্য করে নয়। বরং এটি আঞ্চলিক শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখবে।

চুক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব পারমাণবিক সহায়তা পেতে যাচ্ছে—এই ধারণা প্রথমে ইঙ্গিতে তুলে ধরেছিলেন এক সৌদি কর্মকর্তা। পরে সৌদি ভাষ্যকারেরা এই ধারণা আরও জোরালো করেন।

চুক্তির ঘোষণায় বলা হয়, এটি দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিভিন্ন দিক উন্নত করবে এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধব্যবস্থা শক্তিশালী করবে।

লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার জানান, আরও কিছু দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘এখনই কিছু চূড়ান্ত নয়। তবে আরও কিছু দেশ আগ্রহী। এটি করতে কয়েক মাস সময় লেগেছে, রাতারাতি হয়নি।’

চুক্তিটিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে ইসহাক দার বলেন, ‘সৌদি আরব সব সময় আমাদের পাশে ছিল। আইএমএফ সংকটেও তারা সহায়তা করেছে। তাই এই চুক্তির তাৎপর্য গভীর।’

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.