বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) ইপিজেডগুলোতে কর্মরত তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু ও স্থায়ী শারীরিক অক্ষমতায় আর্থিক সহায়তা দেওয়া শুরু হয়েছে।
এই লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)-এর সহযোগিতায় এমপ্লয়মেন্ট ইনজুরি স্কিম (ইআইএস) নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে বেপজা। এই প্রকল্পে আইএলওকে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জার্মান উন্নয়ন সংস্থা জিআইজেড, আর অর্থায়ন করছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ধানমন্ডির বেপজা কমপ্লেক্সে এই প্রকল্পের আওতায় ঢাকা ও চট্টগ্রাম ইপিজেডে কর্মরত অবস্থায় নিহত দুইজন শ্রমিকের পরিবার এবং কুমিল্লা ইপিজেডে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় শারীরিক অক্ষমতাজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এক শ্রমিককে পেনশনভিত্তিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর ক্ষেত্রে শ্রমিকের সর্বশেষ মাসিক বেতনের ৪০-৬০ শতাংশ এবং আহতদের ক্ষেত্রে শারীরিক অক্ষমতার মাত্রা অনুযায়ী মাসিক ভিত্তিতে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এটি পেনশন কাঠামোয় নির্ধারিত সময় পর্যন্ত চলবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বেপজা, আইএলও এবং জিআইজেড-এর মধ্যে Letter of Intent স্বাক্ষর হয়। পরে এই তিন পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি এনডোর্সমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়, যারা শ্রমিকদের আবেদন যাচাই করে প্রাথমিকভাবে এই তিনজনকে সহায়তা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়।
অনুষ্ঠানে বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান, বিএসপি, এনডিসি, পিএসসি বলেন “প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বেপজা শুধু বিনিয়োগ বাড়ানো নয়, শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার বিষয়েও কাজ করছে। এই কার্যক্রম কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের সুরক্ষা আরও নিশ্চিত করবে। এটি বড় এক উদ্যোগের সূচনা।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আহত-নিহত শ্রমিকদের পেনশন সুবিধা ছাড়াও, ইপিজেডে কোনো ফ্যাক্টরি বন্ধ হলে দ্রুত বেতন প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি। এজন্য একটি তহবিল গঠন করা হবে, যাতে শ্রমিকদের কষ্টের টাকা আটকে না থাকে।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর (নিযুক্ত) ম্যাক্স টুনন, জিআইজেড প্রতিনিধি ড. মাইকেল ক্লোড, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মুনির হোসেন খান, বেপজার সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) আশরাফুল কবীর প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে বেপজার অধীনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৮টি ইপিজেড এবং চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি পটুয়াখালী ও যশোরে আরও দুটি নতুন ইপিজেড প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে।
২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত বেপজাধীন এলাকায় ৪৫৪টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫ লাখ ৫০ হাজার মানুষ কর্মরত। মোট বিনিয়োগ ৭ দশমিক ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং এখন পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে ১২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্য।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, দেশের মোট আয়তনের মাত্র ০ দশমিক ০০১ শতাংশ জায়গা জুড়ে গঠিত বেপজার ৯টি জোন গত অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানির ১৭ দশমিক ০৩ শতাংশ অবদান রেখেছে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.