যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির প্রতি অভিযোগ জানিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, তাঁর দেশের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে এ তিন দেশ ‘বেপরোয়া’ কৌশল অনুসরণ করছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের জোটবদ্ধতা বিশ্বজুড়ে ইউরোপের অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানে গতকাল রোববার প্রকাশিত এক নিবন্ধে আব্বাস আরাগচি এসব মন্তব্য করেন। ইউরোপের এ তিনটি দেশকে ‘ইথ্রি’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ তিনটি এমন একটি প্রক্রিয়া শুরুর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যার মাধ্যমে ইরানের ওপর জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হবে। তবে এর কোনো আইনি ভিত্তি নেই এবং এটি ব্যর্থ হতে বাধ্য।
আব্বাস আরাগচি লেখেন, ‘আসল সত্যটা হলো, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে একটি বেপরোয়া পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। গুরুতর ভুল অনুমানের ওপর ভিত্তি করে নেওয়া এ পদক্ষেপ উল্টো ফল দেবে।’
গত আগস্টে ইউরোপের তিন বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ—জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য—ইরানের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির ‘গুরুতর লঙ্ঘনের’ অভিযোগ এনে ৩০ দিনের একটি প্রক্রিয়া শুরু করে, যার মাধ্যমে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আবার কার্যকর করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে গত জুনে ইসরায়েলের হামলার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়। এখন ওয়াশিংটন ইউরোপের তিন দেশের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, চুক্তি লঙ্ঘন করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান নয়। ২০১৫ সালের যৌথ কর্মপরিকল্পনা থেকে একতরফাভাবে সরে দাঁড়িয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। অথচ ইউরোপের তিন দেশ এই সত্যটি উপেক্ষা করছে। ইরান শুধু চুক্তির অধীনে বৈধ প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, কিন্তু ইথ্রি নিজেদের প্রতিশ্রুতি পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
আব্বাস আরাগচি স্মরণ করিয়ে দেন, ২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর ইউরোপীয় নেতারা তেহরানের সঙ্গে বাণিজ্য রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি বলেন, মার্কিন চাপের মুখে ইউরোপের ‘কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের’ প্রতিশ্রুতি ভেঙে পড়েছে।
উল্লেখ্য, গত জুনে জার্মানির চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেছিলেন, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে সামরিক আক্রমণ চালাচ্ছে, তাতে পশ্চিমারা লাভবান হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, “এটা একটা নোংরা কাজ, যা ইসরায়েল আমাদের সবার জন্য করছে।”
আলোচনার প্রসঙ্গে আব্বাস আরাগচি লেখেন, আলোচনার জন্য দরজা এখনো খোলা রেখেছে তেহরান। তিনি বলেন, “ইরান একটি বাস্তবসম্মত ও স্থায়ী দর–কষাকষি করতে প্রস্তুত। কঠোর নজরদারি ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণের ওপর নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।”
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনও জানিয়েছে, ইরানের সঙ্গে আলোচনার জন্য তাদের দরজা খোলা রয়েছে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.