ভারতে বিরল খনিজ রপ্তানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

ভারত ও চীনের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। প্রতিরক্ষা ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিরল খনিজ রপ্তানিতে এতদিন যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল চীন, তা এখন তুলে নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে চীন ভারতের কৃষি, প্রযুক্তি ও অবকাঠামো খাতে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

বুধবার (২০ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সোমবার সন্ধ্যায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠকে এই অগ্রগতির বিষয়টি চূড়ান্ত হয়। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, চীন ভারতের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে—সার, বিরল খনিজ এবং টানেল-বোরিং যন্ত্রপাতির সরবরাহ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ভারতের উদ্বেগের জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল চীনের আকস্মিক সার রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, যা রবি মৌসুমে ডি-অ্যামোনিয়াম ফসফেটের সংকট তৈরি করেছিল। একইভাবে টানেল বোরিং যন্ত্রের চালান আটকে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি অবকাঠামো প্রকল্প থমকে গিয়েছিল। অটো ও ইলেকট্রনিক শিল্পখাত চীনের বিরল চৌম্বক খনিজ রপ্তানি বন্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, সীমান্ত থেকে সেনা প্রত্যাহার, রাজনৈতিক মতপার্থক্য নিরসন এবং পারস্পরিক আস্থাবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এবার অর্থনৈতিক সম্পর্কও সহজীকরণে পৌঁছেছে ভারত ও চীন। গত মাসে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দুটি বৈঠকও এই প্রক্রিয়ার অংশ ছিল।

বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটেও এই সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির কারণে ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যা এখন দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রতি তুলনামূলকভাবে নমনীয় নীতি অনুসরণ করছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের বিরল খনিজকে বলা হয় ‘২১ শতকের তেল’। এগুলো ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্প প্রায় অচল। স্মার্টফোন, চিপ, ব্যাটারি, স্যাটেলাইট, ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি—সবক্ষেত্রেই এ খনিজ অপরিহার্য। বিশ্বব্যাপী এই উপাদানের ৬০–৭০ শতাংশ উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াকরণ নিয়ন্ত্রণ করে চীন। অতীতে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও বিরোধে এসব উপাদানের রপ্তানি সীমিত করে চীন রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে ভারতের প্রতি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং কৌশলগত ও রাজনৈতিক দিক থেকেও একটি আস্থার বার্তা বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.