কৃষকরা যেন কৃষি ঋণ পেতে অসুবিধায় না পড়েন, তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি করবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ৩৯ হাজার কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি।
গভর্নর জানান, কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে এ ঋণ প্রবাহ নিশ্চিত করতে ৩৯ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ১৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ২৫ হাজার ১২০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
কৃষি ঋণ বিতরণে তদারকি বাড়ানোর ঘোষণা
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “কৃষি ঋণের সবটাই কৃষকের কাছে পৌঁছায় কিনা, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আমরা এটি পর্যালোচনা করছি। আমরা চাই, শতভাগ কৃষি ঋণ কৃষকের কাছে যাক, দালালের কাছে যেন না যায়। এটি পর্যালোচনা করছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি করবে।”
কৃষির প্রতি অর্থনীতির নির্ভরতাকে চ্যালেঞ্জ
গভর্নর দেশের অর্থনীতিতে কৃষির অবদান সম্পর্কে বলেন, “সামগ্রিক অর্থনীতিতে কৃষির অবদান সাড়ে ১৩ শতাংশের মতো। কিন্তু কৃষিভিত্তিক খাতে কর্মসংস্থান ৪০ শতাংশের মতো, যা আমাদের জন্য একটি ব্যর্থতা। কারণ আমরা এখনো গ্রামের মানুষকে শিল্পায়ন ও সেবা খাতে নিতে পারিনি। এ কারণে গ্রামীণ পর্যায়ে কৃষিনির্ভরতা এখনো রয়ে গেছে।”
কৃষি ঋণ নীতিমালায় পরিবর্তন প্রয়োজন
তিনি বলেন, “কৃষি ঋণ আদায়ের নীতিমালা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। ব্যাংকারদের সঙ্গে বসে কিছু পরিবর্তন করা দরকার। একটি শস্য ঘরে উঠতে চার মাস লাগলে, বিক্রি এবং অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় অতিরিক্ত দুই মাস সময় দিয়ে ক্রপ সার্কেল করতে হবে। তিন মাসের ক্রপ সার্কেল কৃষকের জন্য ভালো হবে না।”
এছাড়া, সুদ মওকুফের বিষয়ে নীতিমালা নিয়েও ভাবনা থাকতে পারে বলে তিনি জানান। “ব্যাংকারদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারি, কী করলে ঋণের ক্ষেত্রে কৃষকদের আরেকটু স্বস্তি দেয়া যায়,” বলেন তিনি।
কৃষি বীমা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ
কৃষি বীমা সম্পর্কে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “কৃষি বীমা নিয়ে আমি খুব একটা উৎসাহী না। কারণ, আমাদের আসল বীমাগুলোই চলছে না। কৃষি বীমা ঝুঁকিপূর্ণ এবং ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো এতে দক্ষ নয়। আগামী ১০ বছরেও এর ভবিষ্যৎ আমি দেখছি না। তবে, যদি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো এটি করতে পারে, তাহলে স্বাগত জানাব।”
অর্থনীতিতে আমদানির ভুল নীতি
গভর্নর দেশের আমদানি নীতিতে সরকারের ভুল রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “বছর শেষে যখন দাম বাড়ে তখন আমদানির জন্য ছেড়ে দিই। এটি তো আগে থেকেই দিতে পারি। বাংলাদেশে যে দাম আছে, তার ওপর ২০ শতাংশ ট্যাক্স বসিয়ে দেই, যার ইচ্ছা আনবে। তবে আমরা তা করি না। এটি আরেকটি ভুল, যা আমরা আবারো করতে যাচ্ছি। আমি এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে বলেছি, এটি নিয়ে দ্রুত কাজ করতে হবে।”
ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ
ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে জানিয়ে গভর্নর বলেন, “কিছু ব্যাংককে একীভূত করতে হবে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মোটামুটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারকে অবহিত করে এটি সামনে এগিয়ে নেব।”
এসময়, আমানতকারীদের শঙ্কা নিয়ে গভর্নর বলেন, “আতঙ্কের কিছু নেই। এটি করলে সবার আমানত নিরাপদ হবে। বর্তমান পরিস্থিতির চেয়ে একীভূত হলে আরো ভালো হবে। সরকারীকরণ হলে সরকারই দায়ভার নেবে। এ বিষয়ে আমানতকারীরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।”
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.