দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন মার্কিন শুল্ক পাকিস্তানের

দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম শুল্ক নিয়ে আলোচনার টেবিল থেকে ফিরে আসতে পেরেছে ইসলামাবাদ। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেশটির শুল্ক হার ২৯ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৯ শতাংশ করা হয়েছে।

 

নতুন শুল্ক ঘোষণা আসার পরপরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। খবর সিএনএনের

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, শুল্ক সুবিধা পেয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান সরকার। দেশটি এক মাস আগে বিদেশি ডিজিটাল সেবার ওপর চালু করা ৫ শতাংশ কর বাতিল করেছে। স্থানীয়ভাবে এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বন্ধুত্বের একটি লক্ষণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

 

পাকিস্তানের জন্য আরও আনন্দের বিষয় হলো, তাদের শুল্কের হার প্রতিবেশী এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের চেয়ে অনেক কম। ভারতের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা পাকিস্তানের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি। এর ফলে পাকিস্তানের মধ্যে যে ভয় ছিল, ভারত তাদের অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে, তা এখন কিছুটা কমেছে।

 

গতকাল (৩১ জুলাই) রাতে পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এই চুক্তিটি জ্বালানি, খনি ও খনিজ, আইটি, ক্রিপ্টোকারেন্সি এবং আরও অনেক খাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতার একটি নতুন যুগ শুরু করেছে।

 

যুক্তরাষ্ট্র হলো পাকিস্তানের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার। এই খাতে ভারত, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা করে পাকিস্তান। এই দেশগুলোর ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তাই নতুন এই ঘোষণা পাকিস্তানের তৈরি পোশাক খাতের জন্য খুবই ভালো খবর। কারণ, পাকিস্তানের মোট রফতানির প্রায় ৬০ শতাংশ আসে এই খাত থেকে।

 

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের কথা জানিয়েছিল মার্কিন প্রশাসন। সে হিসাবে শুল্ক ১৫ শতাংশ কমিয়ে নতুন হার ঘোষণায় করা হয়েছে।

 

শুক্রবার (১ আগস্ট) শুল্ক নিয়ে হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় এ কথা বলা হয়েছে। ঘোষণা অনুযায়ী, অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, আফগানিস্তানের ওপর ১৫ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, ব্রাজিলের ওপর ১০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, ফিলিপাইনের ওপর ১৯ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ ও ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ওয়াশিংটন।

 

গত ২ এপ্রিল বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চহারে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন বাংলাদেশের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পরে ৯ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের ওপর ওই শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। এ সময় শুল্ক নিয়ে আলোচনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিভিন্ন দেশকে আলোচনার সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন।

 

যুক্তরাষ্ট্রের তিন মাসের সময়সীমা গত ৯ জুলাই শেষ হয়। এর আগের দিন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চিঠি দিয়ে ট্রাম্প জানান, বাংলাদেশের পাল্টা শুল্ক ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। যদিও ৯ জুলাইয়ের পর পাল্টা শুল্ক কার্যকর করেনি মার্কিন প্রশাসন। শুল্কের হার কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য ৩১ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন দেশকে সময় দেওয়া হয়।

 

সেই সময়সীমা শেষে আজ (১ আগস্ট) থেকে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা। সে হিসাবে আজ থেকে বাংলাদেশকে বর্তমানের গড় ১৫ শতাংশ ও নতুন পাল্টা শুল্ক ২০ শতাংশ, অর্থাৎ মোট ৩৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে হবে।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.