যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ

যুক্তরাষ্ট্রে গরুর মাংসের দাম রেকর্ড ছুঁয়েছে। সাধারণত বারবিকিউ মৌসুমে এ সময়টায় মাংসের দাম বাড়ে, তবে চলতি বছর একাধিক কারণ একত্রে মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এই পরিস্থিতি থেকে ক্রেতারা শিগগিরই রেহাই পাচ্ছেন না।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে এক পাউন্ড গরুর কিমার গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৬ ডলার ১২ সেন্ট, যা এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১২ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে রান্না না করা মাংসের বড় টুকরার (বিফ স্টেক) গড় দাম পাউন্ডপ্রতি হয়েছে ১১ ডলার ৪৯ সেন্ট—বৃদ্ধি প্রায় ৮ শতাংশ।

মূল্যবৃদ্ধির পেছনে দীর্ঘমেয়াদি একটি ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিগত দুই দশক ধরে দেশটিতে গরুর সরবরাহ কমার প্রবণতা থাকলেও চাহিদা থেকে গেছে স্থিতিশীল। মার্কিন কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরুতে গবাদিপশুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৬৭ লাখ, যা ২০১৯ সালের তুলনায় ৮ শতাংশ কম এবং ১৯৫১ সালের পর সর্বনিম্ন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২০ সালে শুরু হওয়া দীর্ঘ খরার ফলে পশুখাদ্যের দাম বাড়ায় খামারিরা প্রজননক্ষম গরু জবাই করে দিতে বাধ্য হন। এতে অল্প সময়ে বাজারে সরবরাহ বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে গরুর সংখ্যা আরও কমে যায়।

বর্তমানে বাজারে একেকটি গরুর দাম হাজার হাজার ডলার পর্যন্ত উঠেছে। ১০০ পাউন্ড গরুর দাম ২৩০ ডলারেরও বেশি। এতে অনেক খামারি তাৎক্ষণিক মুনাফার আশায় গরু বিক্রির দিকে ঝুঁকছেন, যা ভবিষ্যতের সরবরাহ সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

মেক্সিকো থেকে আসা গবাদিপশুর মধ্যে মাংসাশী পরজীবী শনাক্ত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত দিয়ে গরু আমদানি বন্ধ করেছে। অথচ দেশটির ৪ শতাংশ জবাইকৃত গরু আসে মেক্সিকো থেকে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই পরজীবী যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়লে এর অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে ব্যাপক।

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর প্রায় ৪০০ কোটি পাউন্ড গরুর মাংস আমদানি করে। এর বড় অংশ আসে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে, যেগুলোর ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। তবে ব্রাজিল থেকে আসা গরুর মাংসে উচ্চ শুল্ক আরোপের হুমকি দিচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদি এসব শুল্ক কার্যকর হয়, তাহলে মাংস প্রক্রিয়াজাতকারীদের খরচ বাড়বে এবং এর প্রভাব সরাসরি দাম বৃদ্ধিতে পড়বে।

বারবিকিউ মৌসুমে গরুর মাংসের চাহিদা বরাবরের মতোই বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো ক্রেতারা গরুর মাংসের বিকল্প হিসেবে মুরগি বা শূকরের মাংস বেছে নিচ্ছেন না। ফলে চাহিদা স্থিতিশীল থাকায় দাম কমার সম্ভাবনাও খুবই সীমিত।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খরা কিছুটা কমায় চারণভূমির অবস্থা উন্নত হয়েছে এবং শস্যের দামও হ্রাস পেয়েছে। এতে খামারিরা গরু বিক্রির পরিবর্তে প্রজননে আগ্রহী হতে পারেন। তবে নতুন গরু বাজারে তুলতে অন্তত দুই বছর সময় লাগে। ফলে এর সুফল বাজারে আসতে আরও সময় লাগবে।

সাধারণত মৌসুম শেষে গরুর মাংসের দাম কিছুটা কমে। তবে চলতি বছর তা খুব সামান্যই হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অর্থসূচক/ এএকে

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.