ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ আবারও বেড়ে গেছে। ২০২৫ সালের মে মাসে ব্যাংকের বাইরে নগদ অর্থের পরিমাণ ১৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।
নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার জন্য কোরবানির ঈদের কেনাকাটা, কিছু ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণা, এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত অর্থ সরবরাহকে প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকের বাইরে নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ২৩০ কোটি টাকা, যা ফেব্রুয়ারিতে কমে দাঁড়ায় ২ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকায়। মার্চে তা বেড়ে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা হয়, এবং এপ্রিল মাসে আবার কমে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকায়। কিন্তু মে মাসে আবার তা বেড়ে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকায় পৌঁছায়।
এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ছাপানো টাকার পরিমাণ এবং বাজারে প্রচলিত টাকাও বেড়েছে। মার্চে রিজার্ভ মানি বেড়ে ৪ লাখ ২ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকায় দাঁড়ায় এবং মে মাসে তা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। বাজারে প্রচলিত মুদ্রাও অনুরূপভাবে বেড়ে যায়।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে পশু কেনা এবং উৎসবমুখর কেনাকাটার জন্য নগদ টাকার চাহিদা বেড়ে যায়। এ ছাড়া মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক একীভূত করে একটি ব্যাংক গঠনের ঘোষণা দেয়। এতে ওই ব্যাংকগুলো থেকে অনেকে টাকা তুলে নেন, ফলে নগদ অর্থের প্রবাহ বেড়ে যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যাংককে ধারও দিয়েছে, যার ফলে মুদ্রা সরবরাহ এবং ছাপানো টাকার পরিমাণ বেড়েছে। যদিও মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিয়েছে, বাস্তবে এর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত বছর আগস্টে মানুষের হাতে নগদ টাকা ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা, যা ডিসেম্বর নাগাদ কমে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭১ কোটি টাকায় নামে। এই সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগপর্যন্ত এস আলম গ্রুপের মতো ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা কয়েকটি ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে নেন, যার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু ব্যাংকে টাকা সরবরাহ করে সংকট সামাল দেয়।
অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ব্যাংক খাতের প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল। একদিকে দীর্ঘ সময় সুদহার ৯ শতাংশে বেঁধে রাখার কারণে ব্যাংক আমানত ছিল অনাকর্ষণীয়, অন্যদিকে লুটপাটের খবর আস্থা নষ্ট করেছে। বর্তমানে সুদহারের সীমা তুলে নেওয়ায় কিছুটা আশাব্যঞ্জক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেও আমানত প্রবৃদ্ধি এখনও সন্তোষজনক নয়।
তথ্য অনুযায়ী, মার্চে ব্যাংক আমানতের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ১৮ হাজার ৬১১ কোটি টাকা, যা এপ্রিল ও মে মাসে বেড়ে যথাক্রমে ১৮ লাখ ২০ হাজার ৬১৬ কোটি এবং ১৮ লাখ ৩২ হাজার ৫৭২ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
এ প্রসঙ্গে এক বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, “ঈদের সময় নগদ টাকার চাহিদা বাড়ে, ফলে গ্রাহকেরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন। তবে আমানতের সুদহার বাড়লেও তারল্য বাড়ছে ধীর গতিতে। ফলে সামনে ঋণের চাহিদা বাড়লে সুদহার আরও বাড়তে পারে।”
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূতকরণ উদ্যোগে যে পাঁচটি ইসলামি ব্যাংককে একত্র করার পরিকল্পনা রয়েছে, তার মধ্যে চারটি এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এবং আরেকটি এক্সিম ব্যাংক, যার মালিকানায় রয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম মজুমদার।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.