বিকল্প বিনিয়োগের গন্তব্য অস্ট্রেলিয়ার রিয়েল এস্টেট খাত

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং জটিল নিয়ন্ত্রক কাঠামোর কারণে বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা বিকল্প ও নিরাপদ বাজারের সন্ধান করছেন। এই প্রেক্ষাপটে দ্রুত আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে অস্ট্রেলিয়ার রিয়েল এস্টেট খাত। স্থিতিশীল অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও নিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটি বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের কাছে নিরাপদ এবং লাভজনক বিনিয়োগের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম নিক্কেই এশিয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রিয়েল এস্টেট ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান জাগা জানিয়েছে, হংকং, সিঙ্গাপুর ও জাপান থেকে বিনিয়োগকারীরা অস্ট্রেলিয়ার আবাসন খাতে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে প্রায় ১০০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার সমমূল্যের সম্পদ ব্যবস্থাপনায় যুক্ত এবং এর ২৫ শতাংশ বিনিয়োগকারী বিদেশি।

জাগার প্রধান নির্বাহী অ্যালান গ্রিনস্টেইন বলেন, “বিনিয়োগকারীরা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে অতিরিক্ত কেন্দ্রীভূত ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। বিকল্প হিসেবে তারা এমন বাজারে যাচ্ছেন, যেখানে স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির সুযোগ আছে।”

অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, বিশেষ করে অভিবাসনের কারণে। সরকারের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশটির জনসংখ্যা ২ কোটি ৭০ লাখ থেকে বেড়ে ২০৩৫ সালের মধ্যে ৩ কোটি ১০ লাখে পৌঁছাবে। এর ফলে বাড়ছে আবাসন সংকট, যা বিনিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি করছে।

গ্রিনস্টেইন জানান, “আবাসনের ঘাটতি মানে শুধু বাড়িই নয়, বরং স্কুল, বাণিজ্যিক স্থাপনা, শপিং সেন্টার—সব কিছুর চাহিদা বাড়ছে। ফলে এ খাতে বিনিয়োগের পরিসর বিশাল।”

অস্ট্রেলিয়ায় ব্যাংকগুলো এখন কঠোর নিয়ন্ত্রক নীতির কারণে আগের মতো সহজে ঋণ দিতে পারছে না। অস্ট্রেলিয়ান প্রুডেনশিয়াল রেগুলেশন অথরিটি (APRA) ভবিষ্যৎ ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ অতিরিক্ত সুদভিত্তিক নিরাপত্তা সীমা আরোপ করেছে। ফলে অনেক ঋণগ্রহীতার জন্য ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে, যা প্রাইভেট ঋণদাতাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।

জাগার প্রধান তহবিল বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহারের (৩.৮৫%) চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি রিটার্ন লক্ষ্য করছে, অর্থাৎ মোট ৮.৮৫ শতাংশ। এ তহবিলে রয়েছে মাসিক আয় বিতরণের সুবিধাও, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ।

সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি সিঙ্গাপুরে একটি প্রাইভেট ক্রেডিট ফান্ড চালু করেছে, যা অস্ট্রেলিয়ার মূল তহবিলের সঙ্গে যুক্ত। এতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আরও সহজ হয়েছে।

চলতি বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া সরকার বিদেশিদের পুরনো আবাসিক সম্পত্তি কেনার ওপর দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তবে নতুন নির্মাণ প্রকল্পে বিনিয়োগে এখনো তেমন বাধা নেই, যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য খোলা সুযোগ রেখে দিয়েছে।

প্রপার্টি প্ল্যাটফর্ম ডোমেইনের মতে, ২০২৬ অর্থবছরের মধ্যে সিডনিতে বাড়ির দাম ৭ শতাংশ এবং অ্যাপার্টমেন্টের দাম ৬ শতাংশ বাড়বে। তখন বাড়ির গড় মূল্য দাঁড়াবে ১৮ লাখ ৩০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার এবং অ্যাপার্টমেন্টের দাম ৮ লাখ ৮৯ হাজার ডলার।

আলভারেজ অ্যান্ড মার্সাল-এর তথ্যমতে, ২০২৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার প্রাইভেট ঋণ বাজার ছিল ২০ হাজার ৫০০ কোটি অস্ট্রেলিয়ান ডলার, যার মধ্যে ৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার রিয়েল এস্টেট-সংক্রান্ত ঋণ। সিডনিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান প্রিভিটি ক্রেডিট পূর্বাভাস দিয়েছে, আগামী তিন-চার বছরে এ বাজার দেড় গুণ পর্যন্ত বাড়তে পারে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.