ট্রাম্পের হুমকির পরও মস্কোর পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন, আতঙ্ক নয় বরং স্বস্তিই দেখছে রাশিয়া

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে উন্নত সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়ার পরপরই মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ারমূল্য গড়ে ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে গেছে। এটি শুধু আর্থিক বাজারের ‘স্থিতিশীল মানসিকতা’ নয়, বরং রাশিয়ার পক্ষ থেকে ট্রাম্পের হুমকিকে তেমন গুরুত্ব না দেওয়ার কৌশলগত প্রতিফলন।

মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) আন্তর্জাতিক সংবদা মাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

ট্রাম্প সোমবার ওভাল অফিসে এক কঠোর ভাষণের মাধ্যমে ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও সর্বোচ্চ মূল্যের অস্ত্র পাঠানোর ঘোষণা দেন এবং বলেন— ৫০ দিনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি না হলে রাশিয়ার ওপর দ্বিতীয় দফার বড় ধরনের শুল্ক আরোপ করা হবে।

তবে রুশ আইনপ্রণেতা কনস্টানতিন কোসাচেভ বলেছেন, “ট্রাম্পের হুমকি কেবল গরম হাওয়া, পরবর্তী ৫০ দিনে অনেক কিছু বদলে যেতে পারে।”

এমন প্রতিক্রিয়ায় রুশ বাজারে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হয়ে বরং স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ঘোষণা রাশিয়ার প্রস্তুতিরই প্রতিফলন— কারণ দেশটি ট্রাম্পের মতো একজন চঞ্চল নেতার কাছ থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল।

ক্রেমলিনপন্থী বিশ্লেষক সের্গেই মার্কভ বলেন, “আজকের পর থেকে ট্রাম্পের ভূমিকায় আমূল পরিবর্তন এসেছে— তিনি এখন রাশিয়ার ওপর একতরফাভাবে চাপ প্রয়োগ করছেন এবং কেবল ইউক্রেনকে সহায়তা করছেন।”

এই প্রেক্ষাপটে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপকে রাশিয়া একদিকে নয়া বাস্তবতা হিসেবে মেনে নিচ্ছে, অপরদিকে কৌশলগতভাবে সময় নিতে চাইছে।

গত কয়েক মাস ধরেই ক্রেমলিন “হ্যাঁ, কিন্তু…” কৌশলের মাধ্যমে যুদ্ধের দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে সময় নেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে মনে করছেন পশ্চিমা বিশ্লেষকরা।

যদিও জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোকে পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অগ্রাধিকার হিসেবে দেখিয়েছিলেন, কিন্তু এখন তার অবস্থান পাল্টেছে।

রাশিয়া জোর দিয়ে বলছে তারা শান্তি চায়, তবে তাদের শর্তে— যার মধ্যে ইউক্রেনে পশ্চিমা অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করাই মূল দাবি। ট্রাম্পের ঘোষণায় স্পষ্ট যে, মার্কিন সহায়তা বন্ধ হচ্ছে না, বরং আরও বাড়ছে।

ন্যাটোর সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে ইউক্রেন যা করতে চায়, তা যেন করতে পারে।” ইউরোপীয় দেশগুলো কিয়েভকে প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেবে, আর যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে তা পুনর্বহাল করতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিকে, কিয়েভ ট্রাম্পের নতুন সামরিক সহায়তা ঘোষণায় প্রাথমিকভাবে সন্তোষ প্রকাশ করলেও পরে হতাশাও জানিয়েছে— সহায়তা পেতে ছয় মাস লেগে গেছে, আর রুশ বাহিনী ততদিনে কিয়েভসহ বিভিন্ন বড় শহরে হামলা অব্যাহত রেখেছে।

ট্রাম্পের ঘোষণায় মার্কিন অবস্থানে দৃঢ়তা এসেছে ঠিকই, কিন্তু রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ততটা প্রতিকূল নয়, বরং অব্যাহত ‘সামরিক-রাজনৈতিক ধৈর্য’ এবং কৌশলগত প্রতিক্রিয়ারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। শেয়ারবাজারে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে।

রাশিয়া বুঝতে পারছে যে চাপ আসবে, তবে তার মোকাবেলার জন্য সময় এখনো আছে। ট্রাম্পের ভাষণে যেমনটা বলা হয়েছে— “৫০ দিনের মধ্যে চুক্তি না হলে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।”

এটাই মস্কোর জন্য ‘স্বস্তির সময়’— যুদ্ধও চলছে, কূটনীতি এখনও চালু।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.