‘বিশ্ব আর কোনো সম্রাট চায় না’, ট্রাম্পকে লুলার পাল্টা হুঁশিয়ারি

ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা এমন অভিযোগ গতকাল সোমবার নাকচ করে দিয়েছেন উন্নয়নশীল দেশগুলোর এ জোটের নেতারা। ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়ে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দ্য সিলভা তাঁকে উদ্দেশ করে সাফ জানিয়ে দেন, ‘বিশ্বের আর কোনো সম্রাটের প্রয়োজন নেই’।

এর আগের দিন গত রোববার রাতে ট্রাম্প ব্রিকস দেশগুলোর ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তিনি বলেন, যারা ‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী’ নীতি গ্রহণ করবে বলে মনে হবে, তাদের বিরুদ্ধে ‘প্রতিশোধমূলক’ শুল্ক বসানো হবে। এরপর গতকাল ১৪টি দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন তিনি।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট হুমকি দিলেও আপাতত ব্রিকস দেশগুলোর ওপর ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা নেই। তবে কোনো দেশ যদি এমন কোনো নীতি নেয়, যা ট্রাম্প প্রশাসনের চোখে ‘বিরুদ্ধাচরণ’ বলে বিবেচিত হয়, তাহলে ওই বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।

রিও ডি জেনিরোতে ব্রিকস সম্মেলন শেষে ট্রাম্পের শুল্ক হুমকি প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের করা এক প্রশ্নের জবাবে লুলা বলেন, ‘বিশ্ব বদলে গেছে। আমরা আর কোনো সম্রাট চাই না।’

প্রেসিডেন্ট লুলা বলেন, এই দেশগুলোর জোট একটি ভিন্ন অর্থনৈতিক কাঠামোর খোঁজ করছে। তাই হয়তো ব্রিকস এখন অনেকের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ব্রিকস যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের ভূমিকা খর্ব করতে চায়, তবে এ জোটকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের মুখে পড়তে হতে পারে। যদিও ব্রাজিলের সভাপতিত্বে হওয়া বর্তমান ব্রিকস সম্মেলনে সদস্যদের মধ্যে যে অভিন্ন মুদ্রা চালুর পরিকল্পনা ছিল, তা থেকে সরে এসেছে এ জোট। গত বছর জোটের কিছু দেশ এমন অভিন্ন মুদ্রার প্রস্তাবি দিয়েছিল।

তবু লুলা তাঁর অবস্থানে অনড়। গতকাল তিনি বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের বিকল্প খোঁজা এখন জরুরি।

‘বিশ্বকে এমন একটি পথ খুঁজে বের করতে হবে, যাতে বাণিজ্যিক লেনদেনের সব কিছু ডলারের মাধ্যমে না করতে হয়’, বলেন লুলা।

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘এটা অবশ্যই দায়িত্বশীলতা ও সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর উচিত, অন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি এগিয়ে নেওয়া। এটা এক দিনে সম্ভব নয়, ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করতে হবে।’

ট্রাম্পের হুমকির জবাবে অন্যান্য ব্রিকস দেশের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্পের হুমকির পর অন্যান্য ব্রিকস সদস্যরাষ্ট্রও নরমভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেন, ব্রিকস কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চায় না এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি হবে বলে তিনি আশাবাদী।

বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, শুল্ককে চাপে রাখার বা বাধ্য করানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ব্রিকস ‘উভয় পক্ষের স্বার্থরক্ষামূলক’ সহযোগিতার পক্ষে এবং এ জোট কোনো দেশের বিরুদ্ধে নয়।

ক্রেমলিনের একজন মুখপাত্র বলেন, ব্রিকসের সঙ্গে রাশিয়ার সহযোগিতা একটি ‘অভিন্ন বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি’র ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এবং এটি কখনোই কোনো তৃতীয় পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে না।

ভারতের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ব্রিকস সদস্য ও সহযোগী অনেক দেশ তাদের বাণিজ্যের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল।

ব্রিকসের নতুন সদস্য ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতিবিষয়ক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী এয়ারলাঙ্গা হারতার্তো ব্রিকস সম্মেলনে উপস্থিত থাকলেও শুল্ক আলোচনা তদারক করতে গতকালই যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন তিনি। ইন্দোনেশিয়ার একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।

অন্যদিকে সহযোগী দেশ হিসেবে ব্রিকসে অংশ নেওয়া মালয়েশিয়া—যাদের ওপর ২৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল (যদিও পরে তা স্থগিত হয়), জানিয়েছে, তারা স্বাধীন অর্থনৈতিক নীতিতে বিশ্বাসী এবং কোনো আদর্শগত পক্ষপাতিত্বের সঙ্গে নেই।

উল্লেখ্য, রোববার প্রকাশিত এক যৌথ বিবৃতিতে ব্রিকস নেতারা সদস্যদেশ ইরানে সাম্প্রতিক বোমা হামলার নিন্দা জানান এবং বলেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়ছে। এতে পরোক্ষভাবে ট্রাম্পের শুল্ক নীতিরও সমালোচনা করা হয়।

তবে কয়েক ঘণ্টা পরই ট্রাম্প হুমকি দেন, যারা ব্রিকসে যোগ দিতে চাইছে, তাদের ‘শাস্তি’ পেতে হবে।

২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন প্রথমবারের মতো ব্রিকস সম্মেলনে বসে। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্ত হয়। গত বছর থেকে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে মিসর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।

সৌদি আরব এখনো পুরোপুরি সদস্য না হলেও অংশীদার দেশ হিসেবে এতে অংশ নিচ্ছে। ইতিমধ্যে ৩০টির বেশি দেশ ব্রিকসে সদস্য বা অংশীদার হিসেবে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.