প্রথম বাজেটটি দিয়েছিল মুজিবনগর সরকার। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দিন আহমেদ ১৯৭২ সালে দেশের প্রথম বাজেট পেশ করেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য দরকারি, অপরিহার্য ব্যয় মেটাতেই এই বাজেট। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ের জন্য তৈরি হয়েছিল বাজেটটি। বাজেটের আকার ছিলো ৮ কোটি ৬২ লাখ ৪৮ হাজার ২০৪ টাকা। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে ৫৩টি বাজেট। এবারের বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
সোমবার (২ জুন) ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করবেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এটি হবে দেশের ৫৪তম বাজেট এবং অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট।
জানা গেছে, গতানুগতিক প্রক্রিয়ার বাইরে এ বছর অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে (রেকর্ড করা) আজ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করবেন। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিতব্য মন্ত্রিপরিষদের বিশেষ বৈঠকে অনুমোদন শেষে তাতে সই করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর অর্থ উপদেষ্টা বাজেট ডকুমেন্টস নিয়ে রামপুরার বিটিভি ভবনে যাবেন। সেখানেই রেকর্ড করা হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। যা বিকাল ৩টায় সম্প্রচার করা হবে।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হতে পারে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। অতীতের রাজনৈতিক সরকারের মতোই ঘাটতির অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি উৎস থেকে এবং বাকিটা ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বাজেটে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ ধরা হতে পারে ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ; যা মহামারিকাল পরবর্তী সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। কৃষি খাতে ধীরগতির কারণেই এই পতন ঘটেছে। তবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। যা চলতি বছরের জন্য সংশোধিত ৫ দশমিক ২৫ শতাংশের চেয়ে সামান্য বেশি।
চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার যেখানে ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, সেখানে আগামী অর্থবছরে তা নামিয়ে আনা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায়। বাজেট ঘাটতি ধরা হচ্ছে জিডিপির ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এবার রাজস্ব বাজেটের আকার কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বারবার ভর্তুকি কমানোর ওপর জোর দিয়ে আসছে, তারপরও সরকার বিদ্যুৎ ও সার খাতে ভর্তুকি কিছুটা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ হতে পারে প্রায় ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.