বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ধার বেড়েছে

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ২০ ফেব্রুয়ারির পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড বিক্রি করে ৭৮ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা ধার নিয়েছে সরকার। এক বছর আগের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিলো ৪৫ হাজার ২৩১ কোটি টাকা। সে হিসাবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ধার নেওয়ার পরিমাণ ৩৩ হাজার ৬০১ কোটি টাকা বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে সরকারের বকেয়া ঋণ ৩ দশমিক ৯৭ লাখ কোটি টাকা। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া ঋণের মাধ্যমে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ধারের ৬২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া সরকারের বকেয়া ধারের পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। এ ধারের পরিমাণ ২০২৪ সালের জুনের ১ দশমিক ৫৬ লাখ কোটি টাকা থেকে কমে ৯৪ হাজার ৪২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকার বর্তমানে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির অংশ হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ধার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধার পরিশোধ করার প্রক্রিয়ায় গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধার পরিশোধ করার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যালান্স শিটকে সংকুচিত করা হচ্ছে, যা আগের অস্বাভাবিক সম্প্রসারণকে সংশোধন করছে।

তারা আরও বলছেন, এই প্রবণতা রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধিকে কমিয়ে দিচ্ছে। গত দুইমাস ধরে মূল্যস্ফীতি কমছে, তবে এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ধার সরাসরি কমানো এখনও দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি অনেক কমে গেছে। এছাড়া বেশ কিছু দুর্বল ব্যাংকের আমানত ঘুরেফিরে কয়েকটি সবল ব্যাংকের হাতে চলে এসেছে। ফলে সবমিলিয়ে ব্যাংকগুলোর হাতে এখন তারল্যের পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেশি।

অনেকসময়ই সরকারের তরফ থেকে যে পরিমাণ ট্রেজারি বিল ও বন্ড নিলামে তোলা হচ্ছে, ব্যাংকগুলো বিড করছে তার কয়েকগুণ বেশি। ফলে ১২ শতাংশ পার করে যাওয়া ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদের হার ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা নভেম্বরের তুলনায় ৩৮ বেসিস পয়েন্ট কম। নভেম্বরে ঋণের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৩ বছরের সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছিল। জুলাইয়ে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। এরপর থেকেই এ প্রবৃদ্ধি ধীরে ধীরে কমছে।

এই প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের ৯ দশমিক ৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের নিট ধার বেড়েছে ১৬ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময় শেষে সরকারের নিট ধার বেড়েছিল ১২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় সরকার ব্যাংক খাত থেকে নিট ধার বাড়িয়েছে ৩৪ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট অনুযায়ী, পুরো অর্থবছরে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকা ধার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। এর মধ্যে ৯৯ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং খাত থেকে এবং ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকিং-বহির্ভূত খাত থেকে নেওয়া হবে। সেই হিসাবে এখন পর্যন্ত প্রায় আট মাসে ব্যাংকিং খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রার ১৭ শতাংশ ধার নিয়েছে সরকার।

২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের নিট ধার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯১ লাখ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের জুনের শেষে ছিল ৪ দশমিকক ৭৪ লাখ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার সরবরাহ কমিয়ে করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকারি ঋণ কমানো এবং নীতিমালা ও সুদহার বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপ নিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

অর্থসূচক/

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.