গত ৫ আগস্ট প্রমাণিত হয়েছে তাদের মিথ্যা ইতিহাস এ দেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেয়নি: জামায়াত 

ভারতের আধিপত্যবাদ যারা মেনে নেয়, যারা কাঁটাতারে ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকার পরও বলে আমরা ভালো আছি, যারা বন্যাপানিতে এদেশের মানুষকে ভাসাতে টিপাইমুখ বাঁধ খুলে দেয়, যারা ট্রানজিটের নামে দেশকে ভারত হাতে তুলে দেয় তারা কখনোই এদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে শক্তি হতে পারে না। তাদের বানানো বিকৃত ইতিহাস গত ৫ আগষ্ট এদেশের ছাত্র-জনতা প্রত্যাখ্যান করেছে।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারী) বিকাল সাড়ে ৩টায় ঐতিহাসিক নাবিস্কো মোড়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের তেজগাঁও উত্তর থানার উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভা, ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী ও ব্লাড গ্রুপিং কার্যক্রম অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।

ভাষা আন্দোলনে ইতিহাস থেকে অধ্যাপক গোলাম আজমের নাম মুছে ফেলা হয়েছে অভিযোগ করে জামায়াতের ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর প্রচার সেলের সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার বলেন, ১৯১১ সালে রংপুর শিক্ষা সম্মেলনে নওয়াব আলী চৌধুরী প্রথম বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানান। ১৯১৮ সালে শান্তি নিকেতনে, আজকে যারা  রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে এতো বন্দোনা করেন কিন্তু এই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইতিহাস আমরা জানি না। তিনি আমাদের বাংলা ভাষা যেন রাষ্ট্রভাষা না হয় তার তীব্র বিরোধিতা করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায়ও বাধা দিয়েছিলেন। ১৯১৮ সালে  রবীন্দ্রনাথ হিন্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়েছেন সেখান ডক্টর মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ তার প্রতিবাদ করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার  দাবি জানিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ১৯৩৪ সালে মওলানা আকরম খাঁ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়েছেন।  এরপর ১৯৪৭/৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যখন (পূর্ব পাকিস্তান )  ঢাকায় এসেছিলেন তখন ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে তৎকালীন ঢাকসুর কেন্দ্রীয় ছাত্র সংবাদ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়েছেন। সেদিন যে স্মারকলিপিটি দেয়া হয়েছিল এবং যিনি সেই স্মরকলিপি দিয়েছেন তার নাম অধ্যাপক গোলাম আজম। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় যখন ২১ ফেব্রুয়ারী আসে তখন প্রজন্মকে বিভ্রান্তি করা হয়। আমরা রবীন্দ্রাথের বন্দোনা করি। যখন ২১ ফেব্রুয়ারি আসে আমাদের বিকৃত ইতিহাস শুনায়। তাদের বলা হয় যারা দাঁড়ি টুপিধারী তাদের ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না।  যারা ইসলাম বিশ্বাস করে তারা ৭১এর স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলো না।  কিন্তু ইতিহাস বলে ভাষা আন্দোলনের লড়াই সংগ্রামে যুক্ত ছিলেন তামুদ্দুম মজলিস। তামুদ্দুম মজলিসের নেতৃত্ব দিয়েছেন ভাষা সৈনিক আবদুল গফুর, সৈয়দ আলী আশরাফ ও অধ্যাপক গোলাম আজম। তারাই সেদিন ভাষা আন্দোলন নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তারা ইসলাম বিশ্বাসী ও আধিপত্যবাদ বিরোধী ছিলেন। তারা দেশও ইসলামকে ভালো বাসতেন।

তিনি আরও বলেন, আজকে যারা বড় বড় কথা বলেন। সেদিন এই তেজগাঁও এলাকায় পোস্ট লাগানোর কারণে গ্রেফতার হয়েছিলেন অধ্যাপক গোলাম আজম। আজকে যারা গোলাম আজমকে দেশবিরোধী বলেন তারাই সবচেয়ে বড় দেশ বিরোধী।

তারা বিকৃত ইতিহাস শুনিয়েছেন, ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন তার বইতে লিখেছেন,  আওয়ামী লীগের অফিসে ১৪ দলের একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে চারজন নেতা বললেন আগামীকালের ১৪৪ ধারা ভাঙতে হবে। কিন্ত ১০ জন নেতা সেই ১৪৪ ধারা ভাঙতে রাজি হননি। সেদিন ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন বলেছেন জনগণের মতামত নিতে হবে।  তখন জনমত ছিলো ১৪৪ ধারা ভাঙার পক্ষে।  সেদিন ১৪৪ ধারা ভাঙায় অধ্যাপক গোলাম আজম গ্রেফতার হয়েছিলেন।

আতাউর রহমান সরকার বলেন, ভারতের আধিপত্যবাদ যারা মেনে নেয়, যারা কাটাতারে ফেলানীর লাশ ঝুলে থাকার পরও বলে আমরা ভালো আছি, যারা বন্যাপানিতে এদেশের মানুষকে ভাসিয়ে টিপাইমুখ বাঁধ খুলে দেয়, যারা ট্রানজিটের নামে দেশকে ভারত হাতে তুলে দেয় তারা কখনোই এদেশের স্বাধীনতার স্বপক্ষে শক্তি হতে পারে না।

আওয়ামী লীগের বানানো ইতিহাস গত ৫ আগষ্ট এদেশের ছাত্র-জনতা প্রত্যাখ্যান করেছে জানিয়ে ২৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী, তেজগাঁও থানা জামায়াতের আমীর মাওলানা হাফেজ আহসান উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে সব সময় চেষ্টা করছ জাতির সামনেনসঠি ইতিহাস তুলে ধরতে। আজ একের পর এক ইতিহাস বিকৃতি হচ্ছে। আমাদের সন্তানররা মিথ্যা ইতিহাস শিখছে।

তাদেরকে এদেশের স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতা, এদেশের ভাষা আন্দোলন, মুসলিমদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টিকালচার এ জাতির সামনে সঠিকভাবে উপস্থাপন না করে বিকৃত ভাবে উপস্থাপন করে ইতোপূর্বে যারা ক্ষমতায়  ছিলেন সেই সব দায়িত্বশীলরা তাদের দায়িত্ব পালন ব্যর্থ হয়েছে। শুধু ব্যর্থই তারা হননি বরং তারা ফ্যাসিবাদের পরিচয় দিয়েছে।

তিনি বলেন,আমাদের কোমলমতি ছাত্র জনতা কে এদেশের শিশু-কিশোরদেরকে। যে মিথ্যা ইতিহাস তারা শিখাতে চেয়েছিল। গত পাঁচ ই আগস্ট তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। এটাই প্রমাণিত হয়েছে তাদের সেই মিথ্যার ইতিহাসকে এদেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেয়নি। এতেই প্রমাণিত হয়েছে সত্যকে কখনো ঢেকে রাখা যায় না।

হাতিরঝিল জোন পরিচালক হেমায়েত হোসেন, জামায়াতের ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তর প্রচার সেলের সেক্রেটারি আতাউর রহমান সরকার, শিল্পাঞ্ল থানা নায়েবে আমির মো কলিমুল্লাহ, তেজগাঁও থানা উত্তর এর সেক্রেরটারী রাকিবুল হক নাসিফ সঞ্লনায় আর বক্তব্য রাখেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও হাতিরঝিল অঞ্চল পরিচালক হেমায়েত হোসেন, বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের প্রচার-মিডিয়া সম্পাদক ও হাতিরঝিল অঞ্চল সহঃ পরিচালক আতাউর রহমান সরকার, শিল্পাঞ্চল থানা আমীর কলিমউল্লাহ, নায়েবে আমীর ও ২৪নং ওয়ার্ড কমিশনার প্রার্থী মো. উল্লাহ ভুইয়া হারুন, শমরিতা হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ইকবাল হোসেন।

অন্যান্যের মধ্যে সভায় বক্তব্য রাখেন থানা কর্মপরিষদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মহসিন খান, মাও. আবু জাফর, শ্রমিক নেতা কাজী মুজিবুর রহমান, বাবর আলী, ছাত্রনেতা মেহেদী হাসান, জামায়াত নেতা মাষ্টার নজরুল ইসলাম। আরও উপস্থিত ছিলেন থানা কর্ম পরিষদ সদস্য মোফাজ্জল হোসেন রকি, সোলাইমান হোসেন, ওয়ার্ড সভাপতি নোমান উদ্দিন। উক্ত আলোচনা সভা শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন হয়।

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.