শিক্ষার্থীরা দল গঠন করতে পারে ও এ লক্ষ্যে তারা জনগণকে সংগঠিত করছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে রাজনীতির ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত একাধিক ইস্যুতে দেওয়া ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের একটি পডকাস্টে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা। সে সময় ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রধান বৈদেশিক বিষয়ক ভাষ্যকর গিডেয়েন র্যাচম্যানের উপস্থাপনায় একটি পডকাস্টে কথা বলেন তিনি। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) ‘র্যাচম্যান রিভিউ’ নামের ওই পডকাস্টের কথোপকথন লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অবদান ও তাদের রাজনৈতি দল গঠনের ব্যাপারে ড. ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীরা যদি দেশের জন্য জীবন দিতে পারে, তাহলে তারা রাজনীতিতেও অংশ নিতে পারে। তারা দেশের জন্য কাজ করছে। এখন তারা বলছে, কেন আমরা নিজেরাই রাজনৈতিক দল গঠন করবো না? আমি বলি, পুরো জাতি তাদেরকে চেনে। তারা যা করতে চায়, সে বিষয়ে তাদেরকে একটা সুযোগ দিই। সুতরাং, তারা এটা করবে।
তবে তিনি সতর্ক করেন যে, রাজনৈতিক দল গঠনের প্রাথমিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা বিভক্ত হয়ে পড়তে পারে ও দেশের প্রচলিত রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব তাদের উপর পড়তে পারে। তবে শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে দেশজুড়ে প্রচারণা ও সংগঠনের কাজ শুরু করেছে।
সিরিয়ার মতো পরিস্থিতির উদাহরণ টেনে র্যাচম্যান প্রশ্ন করেন, দ্রুত নির্বাচন কি বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে? এর জবাবে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমি সবসময় দেশের ঐক্য রক্ষার পক্ষে এবং নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য যে দুটি সময়ের কথা বলেছি, তা যথাযথ।
পডকাস্টের এক পর্যায়ে উপস্থাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, ভারত যা বলছে, তার একটি বিষয়ে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তারা বলছে, বাংলাদেশের অবস্থা খুবই নাজুক। সেখানে ইসলামিস্টরা রয়েছে, যারা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা এমন লক্ষণ দেখি না। অন্তত আমি এখন কোনো লক্ষণ দেখি না। বাংলাদেশের তরুণ সমাজ সত্যিই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাদের খারাপ কোনো কিছুর সঙ্গে সংস্পর্শ নেই বা নিজেদের রাজনৈতিক আখের গোছানোর ব্যক্তিগত আকাঙ্ক্ষা নেই। তারা এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দল গঠন করছে বা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এটা দরকার। কারণ, রক্ত দিয়ে তারা যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো এমন সব ব্যক্তি নিয়ে যাবে, যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যদের মতো সব কিছুর পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ খুঁজছে। আর এটাই বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ ও শিক্ষার্থীরা এই পরিবেশ রক্ষা করার চেষ্টা করছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান লক্ষ্য নিয়ে র্যাচম্যান জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেছেন, আগের সরকার ও সরকার ঘনিষ্ঠ লোকজন সব লুট করে নিয়ে গেছে। ব্যাংকগুলো ফাঁকা বানিয়ে দিয়ে গেছে। তাই, আমাদের প্রধান ও প্রথম লক্ষ্য অর্থনীতির চাকা সচল করা।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.