শ্রীলঙ্কাকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি সরবরাহ করবে ভারত। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ গ্রিড সংযোগ স্থাপন ও পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ব্রিটেন ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন নরেন্দ্র মোদি। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতে এসেছেন কুমারা দিশানায়েকে। জ্বালানি সরবরাহের পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র তৈরিতে সহায়তা করবে ভারত।
রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান পেট্রোনেট এলএনজি শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পাঁচ বছরের জন্য এলএনজি সরবরাহ চুক্তি করেছে। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কোচিতে অবস্থিত পেট্রোনেটের টার্মিনালের মাধ্যমে শ্রীলঙ্কাকে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
মোদি বলেন, ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যেও ভারত বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। ভারতের ঋণের সহায়তা শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মোদি আরও বলেন, ভারত ইতিমধ্যে শ্রীলঙ্কাকে ৫ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটি ডলার ঋণের সহায়তা দিয়েছে।
চলতি বছরের শুরুতে ভারত, ফ্রান্স, জাপান ও চীন শ্রীলঙ্কার ঋণ পুনর্গঠনে এগিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে ভারত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার পর এই ঋণ পুনর্গঠন জরুরি ছিল। বর্তমানে দেশটি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) তত্ত্বাবধানে একটি বেইলআউট কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে।
এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। মূল্যস্ফীতির হার কমেছে, মুদ্রার দরপতনের ধারা থেমেছে। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে রিজার্ভ। সব মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
মোদি আরও বলেন, শ্রীলঙ্কার ২৫টি শহরের বিভিন্ন প্রকল্পে ভারত সহায়তা দিচ্ছে। আগামী বছর জাফনা ও পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের ২০০ ছাত্রকে বৃত্তি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া আগামী পাঁচ বছরে শ্রীলঙ্কার ১ হাজার ৫০০ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রশিক্ষণ দেবে ভারত।
এ ছাড়া আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিষয়েও কথা বলেছেন মোদি। তিনি বলেন, দুই দেশের নিরাপত্তা স্বার্থ পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। দুই দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা চুক্তি আগামী বছর চূড়ান্ত করা হবে।
গত রোববার শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে ভারত সফরে আসেন। সফরে এসে দিশানায়েকে ভারতকে আশ্বস্ত করেন, শ্রীলঙ্কার ভূখণ্ড ভারতবিরোধী তৎপরতায় ব্যবহৃত হতে দেওয়া হবে না।
বামপন্থী জোট ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ারের (এনপিপি) নেতা অনূঢ়া গত ২৩ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর দল ‘জনতা বিমুক্তি পেরামুনা’(জেভিপি) শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে ঘোষিত চীনপন্থী। ১৯৮০-এর দশকে নয়াদিল্লিকে ‘শ্রীলঙ্কার অন্যতম বড় শত্রু’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন জেভিপির প্রতিষ্ঠাতা রোহন উইজেভরা। কিন্তু অনূঢ়া নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম বিদেশ সফরে গেলেন ভারতে।
অর্থসূচক/



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.