গভীর রাতে বিক্ষোভরত আহতদের কাছে ৪ উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের চারজন উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার একজন সহকারী তাঁদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেওয়ার পরই সড়ক ছাড়েন জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে আহতরা। এর আগে যথাযথ চিকিৎসার দাবিতে বুধবার (১৩ অক্টোবর) দুপুর থেকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোর (পঙ্গু হাসপাতাল) সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন তারা। এ সময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের পদত্যাগেরও দাবি করেন তারা।

অভ্যুত্থানে আহত এই ব্যক্তিদের শান্ত করতে বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটায় পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে তাদের কাছে ছুটে যান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় সহকারী (স্বাস্থ্য) হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. সায়েদুর রহমান।

উপদেষ্টারা ভুল স্বীকার ও দুঃখপ্রকাশ করেন। তাঁরা আহতদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনার জন্য আজ দুপুর ২টায় সচিবালয়ে বৈঠকে বসার কথা বলেন। আহতদের প্রতিনিধি দলের যাওয়ার জন্য দুটি গাড়ি পাঠাবেন বলে জানান। আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য একটি রূপরেখা তৈরি করে ডিসেম্বরের মধ্যে তা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেন।

আহতদের উদ্দেশে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, ‘এখন এখানে আপনাদের কথা শোনার মতো উপযুক্ত সময় নয়। আগামীকাল ২টার সময় সচিবালয়ে আসেন। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। সেই রূপরেখা ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।’ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থা না হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।’

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের ভুল আছে। কিন্তু চেষ্টার দিক দিয়ে আমাদের ঘাটতি ছিল না। যে কোনও কারণেই হোক আমরা পারিনি। আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখুন, আমরা একটি সুষ্পষ্ট রূপরেখা দিব, লিখিত দিব।’

নিজেদের দুর্বলতার কথা স্বীকার করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘একটা ভঙ্গুর অবস্থার মধ্যে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। বহু সমস্যা দেখা দিয়েছে। আসুন আমরা আলোচনার ভিত্তিতে একটা রূপরেখা তৈরি করি। সেটা ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য আপনারা একটা টিম করবেন।’

স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সহকারীর দায়িত্বে আসা ড. মো. সায়েদুর রহমান আহতদের দেশের সেরা চিকিৎসা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরা কথা দিচ্ছি, আপনাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করব। না পারলে তখন যা ইচ্ছা করবেন, কোনও আপত্তি থাকবে না। তবে আপনাদের সুষ্ঠু চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা হবে।’

এরপর আহতরা হাসপাতালে ফিরতে রাজি হন। তখন উপদেষ্টারা তাঁদের নিয়ে হাসপাতালে ঢোকেন। রোগীদের হাসপাতালের শয্যায় পৌঁছে দিয়ে পঙ্গু হাসপাতাল ও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীদের দেখে রাত সোয়া ৪টার পর বাসার উদ্দেশে যাত্রা করেন উপদেষ্টারা।

এর আগে রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, শান্ত থাকার আহ্বান জানান। সেসময় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তারা যে চার উপদেষ্টাকে এখানে আসার দাবি জানিয়েছেন তাদের মধ্যে দুজন ঢাকার বাইরে, একজন বিদেশে এবং আরেকজন ক্যান্সারের রোগী। বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা পর্যন্ত সময় দিলে উপদেষ্টাদের সঙ্গে বসা যাবে।

আহতদের এই বিক্ষোভ শুরু হয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগমের পঙ্গু হাসপাতাল পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে। সকালে তিনি জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান। তার সঙ্গে ছিলেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক।

স্বাস্থ্য উপদেষ্টা সবার সঙ্গে দেখা করেননি- এ অভিযোগে হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পথে তার পথ আটকে বিক্ষোভ করেন আহত ব্যক্তিরা। পরে তারা রাস্তায় নামেন।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.