পুলিশের যেসব সদস্য এখনও যোগ দেননি তারা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। তাদের আর যোগ দিতে দেওয়া হবে না বলে জানিছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, আন্দোলনের পরে পুলিশের মধ্যে যারা এখনও কর্মস্থলে যোগদান করেনি, তাদেরকে আর যোগদান করতে দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং যারা অপকর্মে জড়িত ছিল, তাদেরকে মাফ করা হবে না।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে গাজীপুরের সফীপুরে বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম বিসিএস (আনসার) ক্যাডার কর্মকর্তা এবং ২৫তম ব্যাচ রিক্রুট সিপাহী মৌলিক প্রশিক্ষণের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তার বক্তব্যে ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর গৌরবদীপ্ত ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন এবং একইসঙ্গে তিনি জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকার পতনের আন্দোলনে শহীদ সব ছাত্র-জনতাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ আজ নবজাগরণে উজ্জীবিত। বিগত সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের হতে পারেনি বলেই ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার সরকার দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। এই গণ-অভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দিয়েছে আবু সাঈদ, মীর মুখ, ইয়ামিন ও ফাইয়াজদের মতো হাজারো ছাত্র-জনতা।
বাহিনীটির নবনিযুক্ত কর্মকর্তা ও সিপাহীদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের নিকট আমার চাওয়া, দেশ ও জনগণের কল্যাণে আপনারা নিজেদের সপে দিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও ন্যায্যতার মাপকাঠিতে কাজ করবেন। আপনাদের সবার সহযোগিতায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, ইনশাআল্লাহ।’
জুলাই বিপ্লবের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির সময় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে যে সাহসী ভূমিকা রেখেছে, সেজন্য বাহিনীর সবার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকার পতনের পর যখন ট্রাফিক, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শূন্য হয়ে গিয়েছিল, তখন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ডিএমপির থানাগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।’
বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ছয়জন বিসিএস কর্মকর্তা ও ৯০৮ জন রিক্রুট সিপাহী সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের জন্য নির্ধারিত মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করলেন। বিসিএস কর্মকর্তারা দীর্ঘ ১২ মাস মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং একইসঙ্গে মাস্টার্স অব হিউম্যান সিকিউরিটি (এমএইচএস) কোর্স সম্পন্ন করেছেন। অপরদিকে, রিক্রুট সিপাহীরা ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়- বাংলাদেশ পুলিশের ১৮৭ জন সদস্য এখনও কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পট পরিবর্তনের পর ১ আগস্ট থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা কর্মস্থলে যোগাযোগ না করে অনুপস্থিত রয়েছেন। অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ডিআইজি ১ জন, অতিরিক্ত ডিআইজি ৭ জন, পুলিশ সুপার ২ জন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১ জন, সহকারী পুলিশ সুপার ৫ জন, পুলিশ পরিদর্শক ৫ জন, এসআই ও সার্জেন্ট ১৪ জন, এএসআই ৯ জন, নায়েক ৭ জন এবং কনস্টেবল ১৩৬ জন। ১৮৭ জন পুলিশ সদস্যের মধ্যে ছুটিতে অতিবাস ৯৬ জন, কর্মস্থলে গরহাজির ৪৯ জন, স্বেচ্ছায় চাকরি ইস্তফা দিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ৩ জন এবং অন্যান্য কারণে ৩৯ জন কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে, গত ১১ আগস্ট রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে আহত পুলিশ সদস্যদের দেখতে এসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজে না ফিরলে পুলিশ সদস্যরা চাকরি হারাবেন।
তখন সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, আমরা আলোচনা করে একটা নির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে দিব। ওই তারিখের মধ্যে পুলিশ সদস্যরা কাজে না ফিরলে তাদের পলাতক ঘোষণা করা হবে।
সেসময় পুলিশদের থানায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, পুলিশ সদস্যদের সব দাবি মেনে নেওয়া হবে। একইসঙ্গে পুলিশের পক্ষ থেকে সড়কে যানজট নিরসনে কাজ করা শিক্ষার্থীদের সনদ দেওয়া হবে।
অর্থসূচক/এএকে/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.