রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় অঙ্গীভুত আনসার সদস্যদের সঙ্গে শিক্ষার্থী-জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে।
রোববার রাত ৯টার পর এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান।
রাত পৌনে ১০টার দিকে আনসার সদস্যরা সচিবালয়ের সামনে থেকে পালিয়ে যেতে থাকেন। এদের একটি অংশ জিরো পয়েন্টের দিকে চলে যান। অন্য একটি অংশ সচিবালয়ে আশ্রয় নেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে সাধারণ আনসার সদস্যরা। রোববার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব ও সচিবালয় এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে কয়েক হাজার আনসার সদস্য। দুপুর ১টার দিকে আনসার তারা প্রেস ক্লাব ও কদম ফোয়ারার রাস্তা ছেড়ে দিয়ে তারা জিরো পয়েন্ট ও সচিবলয়ের রাস্তা অবরোধ করেন। পরে সচিবালয়ের মধ্যে প্রবেশ করে আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারী আনসার সদস্যদের মধ্য থেকে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘোষণা দেন, বর্তমানে সাধারণ আনসারদের যে রেস্ট প্রথা বা ছয় মাসের বিরতি রয়েছে, সেটা থাকবে না। এটা তাদের মূল সমস্যা। নিয়োগবিধি থেকে সেটা কীভাবে বাতিল করা হবে, কমিটির সুপারিশের পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ। তবে আরেকটি অংশ জাতীয়করণ না নিয়ে বাসায় ফিরবে না জানিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায়।
রাত আটটার দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, সচিবালয়ে আনসারের একদল সদস্য অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেককে আটকে রেখেছে। এমন খবরে ছড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। ‘স্বৈরাচারের দালাল’ আনসার সদস্যদের প্রতিহত করতে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকায় যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রথমে আনসাররা ছাত্রদের ওপর হামলা চালায়। তারপর শুরু হয় উভয় পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। পরে সেখানে অবস্থান নেন সেনাসদস্যরা। সেনাবাহিনী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় পুলিশ।
উল্লেখ, আনসার বাহিনীতে দুই ধরনের সদস্য আছেন, ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য ও অঙ্গীভুত আনসার সদস্য। ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য রাষ্ট্রের অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এরা কোনো আন্দোলনের সাথেও যুক্ত হননি বলে জানা গেছে। আন্দোলন ও বিক্ষোভ করেছেন মূলতঃ অঙ্গীভুত আনসার সদস্যরা। তাদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আজ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অঙ্গীভুত আনসার সদস্যদের ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিল করার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারপরও তাদের একটি গ্রুপ আগ্রাসীভাবে ছাত্রদের উপর চড়াও হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.