২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় আবেদন করা হয়েছে।
২০ আগস্ট হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার চৌধূরী এই আবেদন করেছেন বলে জানান তার আইনজীবী গাজী এম এইচ তামিম।
আবেদনে ঘটনার তারিখ হিসেবে ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে এবং স্থান হিসেবে মতিঝিলের শাপলা চত্বর ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান উল্লেখ করা হয়েছে।
অপরাধের ধরণে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলামীর আন্দোলনকারী নেতাকর্মীদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে শহরব্যাপী ব্ল্যাক আউট করে টিভি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ ও নিয়ন্ত্রণ করে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে হত্যা, লাশগুম করে গণহত্যা ও মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘঠন করে।
অভিযুক্ত আরও আসামিরা হলেন, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক সংসদ সদস্য হাজি সেলিম, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, সাবেক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক আইজিপি একেএম শহীদুল হক ও বেনজীর আহমেদ,র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সদস্য মুনতাসীর মামুন ও তুরিন আফরোজ, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, একাত্তর টিভির এমডি মোজাম্মেল হক বাবু, সময় টিভির আহমেদ জোবায়ের, এবি নিউজের সুভাষ সিংহ রায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ও দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের নাইমুল ইসলাম খান, বিজিবির সাবেক ডিজি ও সাবেক সেনা প্রধান আজিজ আহমেদ, গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সাবেক ডিজি এম মনজুর আহমেদসহ অজ্ঞাতনামা কতিপয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও কতিপয় বিজিবি, র্যাব , পুলিশ সদস্য এবং তৎকালীন কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার নীতি নির্ধারক।
উল্লেখ, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলাচত্বরে হেফাজতের সমাবেশের পর সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা রাতে সেখানে অবস্থান করেন। সারাদিনে মিছিল-সমাবেশে ক্লান্ত মাদ্রাসা ছাত্র ও শিক্ষকদে বড় অংশ মাঝরাতের দিকে প্রায় ঘুমিয়ে পড়েন। এমন সময় মতিঝিল ও আশপাশের এলাকার বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিকে অন্ধকারে নিরীহ শিশু-কিশোরদের উপর চারদিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ ও র্যাবের একাধিক টিম। আকষ্মিক সাউন্ড গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আতঙ্কিত ছাত্ররা দিকবিদিকজ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে থাকে। এদের উপর নির্বিচারে গুলি করা হয় বলে অভিযোগ আছে। নিহতদের লাশ সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার ট্রাকে করে নিয়ে দূরে ফেলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ আছে। তাছাড়া পরের দু’দিন ঢাকার কয়েকটি কবরস্থানে স্বাভাবিক সময়ের কয়েকগুণ বেশি বেওয়ারিশ লাশ কবর দেওয়া হয় বলে জানা যায়। সন্দেহ করা হয়, লাশগুলো নিহত ছাত্রদের। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ও ওয়াসার গাড়ি পানি ছিটিয়ে মতিঝিলের রক্তের দাগ মুছে ফেলে বলেও অভিযোগ আছে। যদিও আওয়ামীলীগ সরকার কোনোদিন এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেনি।
এদিকে, সোমবার (১৯ আগস্ট) শাপলাচত্বরে হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যার তালিকা প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। সংগঠনটি ৬১ জনের নাম-পরিচয় দিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করে।
অর্থসূচক/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.