গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর থেকে লাপাত্তা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ও শেখ পরিবারের দাপটশালী সদস্য শেখ ফজলে নুর তাপস। দোর্দণ্ডপ্রতাপশালী তাপস দেশের কোথাও আত্মগোপনে আছেন, নাকি বিদেশে পালিয়ে গেছেন সেটি নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না। তবে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগেই তিনি দেশ থেকে চলে গেছেন।
এদিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে আওয়ামীলীগের অনেক নেতা ও মন্ত্রী-এমপির দম্ভ আর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের নানা ঘটনা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। খোদ আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিভিন্ন নেতার নানা বচন ও আচরণ নতুন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে।
শেখ পরিবারের সদস্য ও শেখ হাসিনার মামাত ভাইয়ের ছেলে তাপসের বিভিন্ন ঘটনাও এখন আলোচনা আছে। চরম উদ্ধত ও অসহিষ্ণু শেখ ফজলে নুর তাপস মতে অমিল হলেই যাকেতাকে পানিতে চুবানোর হুমকী দিতেন। বয়স, পদবী, সামাজিক অবস্থান কোনো কিছুই বিবেচনায় নিতেন না তিনি। বাবা বা মায়ের বয়সী মানুষকে রেহাই দিতেন না। সুলতানা কামালের মতো সম্মানিত মানুষকেও তিনি ধোলাইখালের পানিতে চুবোনার হুমকী দিয়েছিলেন।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল জানান, একবার পরিবেশ সংক্রান্ত একটি ইস্যুতে কথা বলতে গেলে শেখ ফজলে নুর তাপস তাকে পানিতে চুবানোর হুমকী দিয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানে সুলতানা কামাল বলেন, আমরা যখন পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গেলাম, অত্যন্ত স্নেহের পাত্র আমার, মেয়র তাপস; ছোটবেলা থেকে দেখেছি, কারণ, একই পাড়ায় থেকেছে। আমরা সবাই যখন পরিবেশ নিয়ে কথা বলতে গেলাম, তিনি বললেন যে যদি বেশি কথা বলে ধোলাইখালে নিয়ে চুবাব।
এর আগেও তিনি সুশীল সমাজকে বুড়িগঙ্গায় চুবানোর হুমকি দিয়েছিলেন। গত বছর মে মাসে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘যে সব সুশীলরা আমাদেরকে বুদ্ধি দিতে যাবেন, সেই সব সুশীলদের আমরা বস্তায় ভরে বুড়িগঙ্গা নদীর কালো পানিতে ছেড়ে দেবো।’
সেই অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘মনটা চায় আবার ইস্তফা দিয়ে ফিরে আসি। যেখানে মুগুর দেওয়ার সেটাও জানি। একজন চিফ জাস্টিসকেও নামিয়ে দিয়েছিলাম।
এর আগে অবশ্য তার ফুফু ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনেককে পানিতে চুবানোর কথা বলেন।
২০২২ সালের ১৮ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পদ্মা সেতু থেকে নদীতে ফেলে দেওয়া ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদ্মায় চুবানোর কথা বলেন।
ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘খালেদা জিয়া বলেছিল, ‘জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না, চড়লে ভেঙে পড়বে।’ পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে (খালেদা জিয়াকে) টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত। আর যিনি আমাদের একটা এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো সেতুর টাকা বন্ধ করেছেন, তাকে পদ্মা নদীতে নিয়ে দুই চুবানি দিয়ে উঠিয়ে নেওয়া উচিত। মরে যাতে না যায়। একটু পদ্মা নদীতে দুইটা চুবানি দিয়ে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।’’
হাসিনা, তাপস, ওবায়দুল কাদেরসহ অনেক মন্ত্রী-নেতার এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের ঘটনা নিয়ে মাঝেমধ্যেই সরগরম হচ্ছে চায়ের টেবিল।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.