প্রথম বাজেটটি দিয়েছিল মুজিবনগর সরকার। স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য দরকারি, অপরিহার্য ব্যয় মেটাতেই এই বাজেট। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ের জন্য তৈরি হয়েছিল এই বাজেট। এ বাজেটের আকার ছিলো ৮ কোটি ৬২ লাখ ৪৮ হাজার ২০৪ টাকা। এরই মধ্যে পার হয়ে গেছে ৫২টি বাজেট। এবারের ৫৩তম বাজেটের আকার দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন ৮২ বছর বয়সী অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এটি তার প্রথম বাজেট।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন অর্থবছরের জন্য সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব করা হচ্ছে, তাতে ঘাটতিই থাকবে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই বিশাল পরিমাণ ঘাটতি পূরণে কয়েকটি খাতকে উৎস হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। এই খাত থেকে মোটা দাগে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হচ্ছে।
এর বাইরে বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার সহায়তা পাওয়া যাবে বলেও ধরা হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ঋণও রয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংক বহির্ভূত খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। জানা গেছে, নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ।
নতুন রাজস্ব প্রাপ্তির মধ্যে বরাবরের মতো এবারও বেশির ভাগ আয় করার দায়িত্বটি থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেয়া হয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। নন-এনবিআর থেকে আসবে আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির টার্গেট থাকছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যদিও দীর্ঘদিন থেকে আয়-ব্যয়ের বিপুল ঘাটতি রেখে বাজেট দিতে হচ্ছে সরকারকে। তবুও প্রতি বছরই বাড়ছে বাজেটের আকার। যার প্রভাব পড়ছে দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। কেননা বাজেটের বড় একটা অংশ আসে নাগরিকদের দেয়া কর থেকে। অবশ্য বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ খুব একটা নেই। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় আমলা কিংবা প্রভাবশালীদের প্রভাব বেশি থাকে।
এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে চার শতাংশের একটু বেশি। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দিতে গিয়ে বাজেটের আকার বাড়াতে পারেনি সরকার।
হিসাব মতে, গত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে বার বারই সরকারের পক্ষ থেকে আশার কথা শোনানো হচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার। লাগাম টেনে ধরতে না পারার এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে অর্থ বিভাগ। এমন পরিস্থিতিতে বাজেট বক্তৃতায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অর্থমন্ত্রী কী বলবেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে পাঁচ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে ঘাটতি মেটাতে পৌনে তিন লাখ কোটি টাকা দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল এনবিআরকে। পরে এনবিআরের চাপাচাপিতে লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা কমানো হলেও রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনও অনেক দূরে অবস্থান করছে প্রতিষ্ঠানটি।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ১০ মাসে মোট ২ লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করতে পেরেছে রাজস্ব বোর্ড। এই সময়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৪ কোটি টাকা। ঘাটতি ২৪ হাজার ২০৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায়ে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঢের পিছিয়ে প্রতিষ্ঠানটি।
অর্থসূচক/এমএইচ



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.