টানাপোড়েনের বাজেট ঘোষণা

‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’-প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের নতুন মেয়াদে প্রথম বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। একদিকে জনগণকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ থেকে থেকে সুরক্ষা দেওয়ার তাগিদ, অন্যদিকে দেশীয় অর্থনীতিতে বিদ্যমান তীব্র চাপ, সম্পদের অপ্রতুলতা-এর মধ্যেই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে সম্পদের অপ্রতুলতার কারণে

সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার এই বাজেটে অর্থের যোগান হয়ে উঠবে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকার ব্যাংক খাত থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নিতে বাধ্য হলে তা একদিকে মূল্যস্ফীতিকে আরও উস্কে দেবে, অন্যদিকে বেসরকারি খাত প্রাপ্য ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এটি উৎপাদন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানকে ব্যাহত করবে।

আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

বাজেটের আকার

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের মোট আকার তথা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৩৫ হাজার ২১৫ কোটি টাকা বা ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। তবে এ বাজেট বাস্তবায়ন সম্ভব না হওয়ায় তা সংশোধন করে ৭ লাখ ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮২ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

প্রস্তাবিত বাজেট আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। তবে সংশোধিত বাজেটে এটি কমে ১৪ দশমিক ১৫ শতাংশ হয়েছে।

পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়

আগামী অর্থবছরের বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা, যা বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৫৩ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা বেশি। বর্তমান অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই খাতে ব্যয় ধরা হয় ৪ লাখ ৫৩ হাজার ২২৮ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আর এডিপিসহ মোট উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের মোট বাজেটের ৬৩ দশমিক ৬১ শতাংশ ব্যয় হবে পরিচালন তথা রাজস্ব খাতে। আর বাকী ৩৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ যাবে উন্নয়ন খাতে।

রাজস্ব আয়

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের করসমূহ থেকে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের মূল বাজেটের চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বহির্ভুত কর থেকে আয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি

প্রতিবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও রাজস্ব আয়ের চেয়ে সামগ্রিক ব্যয় হবে বেশি। তাতে বাজেটে থাকবে ঘাটতি। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা (বৈদেশিক অনুদান ব্যতিত)। ঘাটতির হার জিডিপির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ।

২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা (বৈদেশিক অনুদান ব্যতিত)। ঘাটতির হার জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মূল বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয় ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ঘাটতি (অনুদান ব্যতিত) বাড়ছে ১৯ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।

বাজেট ঘাটতি পূরণ

মূলত অভ্যন্তরীন ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে বাজেট ঘাটতি পূরণ করা হবে। এর মধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা অভ্যন্তরীন উৎস হতে এবং ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণের মাধ্যমে সংস্থান করা হবে।

অভ্যন্তরীন উৎসের মধ্যে থেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা।তবে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা।

 

 

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.