বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলার শক্তিশালী হচ্ছে। বিপরীতে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার দরপতন হচ্ছে। আজ বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলারে ৭ টাকা বাড়িয়ে নতুন বিনিময় হার পদ্ধতি চালু করেছে। এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন হয়েছে।
মার্কিন ডলার প্রধানতম বৈশ্বিক মুদ্রা। যদিও মার্কিন ডলারের পাশাপাশি ইউরো জনপ্রিয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এই দুটির প্রচলন বেশি। ডলার শক্তিশালী হলে মার্কিন ডলার কিনতে বিভিন্ন দেশকে তাদের মুদ্রার বিপরীতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। ক্রমবর্ধমান ডলার বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় একটি প্রভাব ফেলেছে।
বিশ্বে মূলত এখন ভাসমান বিনিময় হার নীতি মানা হয়। ফলে বাজারের চাহিদা-জোগানের ওপর মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারিত হয়। কিন্তু পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে চায় না অনেক দেশই। কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকও দীর্ঘ একটা সময় ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেধে রেখেছিলো। অর্থনীতিবিদরা এতদিন একটি ভাসমান বিনিময় হারের কথা বলে আসছিলেন। তবে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি তাতে মোটেও কর্ণপাত করেনি। এতে ডলারের বাজারে অস্থিরতা আরও বেড়েছে।
অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংক আজ নিয়ন্ত্রিত ভাসমান বিনিময় হার চালু করলো, যার নাম দেওয়া হয়েছে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে মুদ্রার দর একবারেই খুব বেশি বাড়তে পারবে না, আবার কমতেও পারবে না।
সাধারণত যেসব দেশের রপ্তানি বেশি ও আমদানি কম তারাই নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়নে বেশি আগ্রহী হন।
টাকার অবমূল্যায়নে কার লাভ?
ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে মূলত রপ্তানিকারক ও প্রবাসীরা লাভবান হন। যেমন ডলারের বিপরীতে টাকার দর ১১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর অর্থ হচ্ছে টাকার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে ৭ টাকা। এর ফলে রপ্তানিকারকেরা প্রতি ডলার আয় থেকে বাড়তি ৭ টাকা বেশি হাতে পাবেন। এতে রপ্তানিকারকরা আরও বেশি উৎসাহী হন। একইভাবে প্রবাসীরাও রেমিট্যান্সের প্রতি ডলারের বিপরীতে ৭ টাকা বেশি পাবেন।
কার ক্ষতি?
আমদানি করতে হয় ডলার কিনে। ফলে আগের চেয়ে ৭ টাকা বেশি দিয়ে আমদানিকারকদের ডলার কিনতে হবে। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এরফলে দেশের মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। টাকার অবমূল্যায়নের আগে সাধারণ মানুষ যে পরিমাণ উপার্জন করতেন এখনো তাই করছেন। তারা চাইলেই আগের মতো একই পরিমাণ পণ্য বা পরিষেবা কিনতে পারবেন না।
টাকার অবমূল্যায়নেের কারণে ভ্রমণ ও বিদেশি শিক্ষার ব্যয় বেড়ে যায়। টিউশন ফি ও ফ্লাইটের টিকিট ডলারে পরিশোধ করতে হয়। তাই এতে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়।
অর্থসূচক/ মো. সুলাইমান



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.