তীব্র দলীয় কোন্দলে নাজেহাল ফরিদপুর-৪ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ। তিনি এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন চৌধুরী) সাথে তার তীব্র বিরোধ। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে নিক্সন চৌধুরী তাকে ‘ফকিন্নির সন্তান’ হিসেবে অভিহিত করে বলেন, তিনি (নিক্সন চৌধুরী) এই আসনে দলের মনোনয়ন পাবেন। তবে দলের রায় শেষ পর্যন্ত ‘ফকিন্নির সন্তানে’র দিকে গেছে।
রোববার (২৬ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক ফরিদপুর-৪সহ দেশের ২৯৮ আসনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। কুষ্টিয়া-২ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের প্রার্থীদের নাম পরে প্রকাশ করবে দলটি।
দেশের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রবল কোন্দল চলছে। দ্বাদশ জাতীয় সংদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই কোন্দলের তীব্রতা বেড়েছে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে বিষোদগার করছে। তবে ফরিদপুর-৪ আসনের বিরোধ যেন সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। এখানে দু’জন হেভিওয়েট নেতা কাজী জাফরউল্যাহ ও নিক্সন চৌধুরী একে অপর সম্পর্কে প্রকাশ্যে গালাগালি করছেন।
কাজী জাফরউল্যাহ ও নিক্সন চৌধুরীর দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। মূলত স্থানীয় রাজনীতিতে আধিপত্য ও দলের মনোনয়নকে কেন্দ্র করেই তাদের এই বিরোধ। গত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগ কাজী জাফরউল্যাহকে মনোনয়ন দিয়েছিল। দু’বারই নিক্সন চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে কাজী জাফরকে পরাজিত করেন।
শেখ পরিবারের সদস্য নিক্সন চৌধুরী এবার দলের মনোনয়ন পাবেন বলে দৃঢ়ভাবে আশাবাদী ছিলেন। বিশেষ করে কাজী জাফর প্রায় দু’বছর এলাকায় অনুপস্থিত থাকায় তার এই আশাবাদ প্রবল হয়ে উঠেছিল। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখে কাজী জাফর ফের মাঠে তৎপর হলে দু’জনের কোন্দলের বিষয়টি আবার প্রকাশ্যে আসে।
সম্প্রতি এক সভায় কাজী জাফরউল্যাহ অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নিক্সন চৌধুরী ভাঙ্গায় ১১০০ বিঘা জমি দখল করেছেন।
এর কয়েকদিনের মধ্যেই এক যোগদান অনুষ্ঠানে কাজী জাফরউল্যাহর অভিযোগের কঠিন জবাব দেন নিক্সন চৌধুরী। গত ১৬ নভেম্বর ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, চাচা, অনুরোধ করব দয়া করে সত্য কথা বলবেন। ১১০০ না ২ হাজার বিঘা জমির মালিক আমি। কারণ, আমি আপনার মতো ফকিন্নির ঘরের সন্তান না। টাকা চুরি কইরা পানামার ব্যাংকে পাচার করি নাই। আমরা আপনার মতো দুর্নীতিবাজ না।’
তবে এবারও যে কাজী জাফরউল্যাহ-ই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চলেছেন, তার ইঙ্গিত পাওয়া যায় গত সপ্তাহে, যখন আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে কাজী জাফরউল্যাহকে মনোনীত করা হয়। গত ১৭ নভেম্বর আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভায় দলের সভাপতি শেখ হাসিনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে কাজী জাফরউল্যাহর নাম ঘোষণা করেন।
কাজী জাফরউল্যাহ ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী নির্বাচনে তার স্ত্রী নিলুফার জাফর আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অন্যদিকে ২০২৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কাজী জাফরউল্যাহকে দলীয় মনোনয়ন দিলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী নিক্সন চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কিছু দুর্নীতিবাজকে নিয়ে ২০১৬ সালে প্রকাশিত পানামা পেপারসের তালিকায় কাজী জাফরউল্যাহ ও তার স্ত্রী নিলুফার জাফরের নাম ছিল। ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে অফসোর কোম্পানি রয়েছে বলে তখন পানামা পেপারসে উল্লেখ করা হয়।



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.