দেশে প্রায় দুই বছর ধরে চলছে ডলার সংকট। সংকট কাটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলো। তবে এখন পর্যন্ত সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ডলারের দাম এত বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিগত ভুল সিদ্ধান্তকে দায়ী করছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, প্রকৃত পক্ষে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের উপর ছাড়া হয়নি। আর এ কারণেই ডলারের একাধিক বিনিময় হার প্রচলিত রয়েছে। ডলারের দাম বাজারের উপর ছাড়া নিয়ে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারকদের এক ধরণের স্পর্শকাতরতা আছে। তারা মনে করে একবার দাম নির্ধারণের বিষয়টি বাজারের উপর ছেড়ে দেয়া হলে সেটি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ঠিক বলা যায় না। এছাড়া এটা আবার নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে কিনা তা নিয়েও সন্দিহান বাংলাদেশ ব্যাংক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, রেমিট্যান্স কমার প্রভাব ইতিমধ্যে প্রবাসী আয়ের উপর পড়েছে। খোলা বাজারে ডলারের দাম বেশি হওয়ার কারণে হুন্ডির প্রবণতাও বেড়েছে। হুন্ডি কমাতে না পারলে রিজার্ভ তলানিতে চলে যাবে।
ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালেই আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এর বাইরে বর্তমানে দেশের ব্যাংকগুলো বাড়তি আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে প্রবাসীদের পাঠানো ডলার কিনতে পারে। বাড়তি এই প্রণোদনা ঘোষণা পর দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। তবে তাতে একটুও কমেনি ডলারের বাজারের উত্তাপ। টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্যে হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। বর্তমানে খোলা বাজার থেকে প্রতি ডলার কিনতে খরচ হচ্ছে ১২৬ থেকে ১২৭ টাকা।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু ডলার ক্রেতা জানিয়েছেন, মাঝেমধ্যে জরুরি প্রয়োজনে অল্প কিছু ডলারের প্রয়োজন হয়। সঠিক সময়ে ব্যাংকে গিয়ে ডলার পাওয়া যায় না। এরপর খোলা বাজারে গিয়ে অনেক বেশি দাম কিনতে হয়। অনেক সময় এক ডলারের জন্য ১৩০ টাকা দিয়েও ডলার পাওয়া যায় না।
এর আগে সর্বপ্রথম ২০২২ সালের আগস্টে ডলারের দাম সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় উঠেছিলো। এরপর বেশ কয়েক মাস ডলারের দাম কিছুটা কমতির দিকে ছিলো। তবে চলতি বছরের অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে খোলাবাজারে ডলারের দাম ১২০ টাকায় ওঠে। তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন উচ্চতা ১২৬ থেকে ১২৭ টাকায় ঠেকেছে ডলারের দাম।
এদিকে বাড়তি প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলো বাধ্য নয়। ব্যাংক যদি প্রবাসী আয় কিনতে চায় তাহলে এই প্রণোদনা দিতে পারে। নতুন এই সিদ্ধান্তের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্স প্রবাহে। সমাপ্ত অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার পাঠিয়েছে। এর আগের মাসে এসেছিল ১৩৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে প্রবাসী আয় বেড়েছে ৬৩ কোটি ডলার।
সংকট মোকাবেলা করতে অর্থনীতিবিদ সহ সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গে বৈঠক করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সবশেষ গত ৮ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেন বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিন বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বড় দেরি করে ফেলেছে। যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেগুলো আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল। পাশাপাশি হুন্ডি নিয়ন্ত্রণে গ্রহণ করা পদক্ষেপ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক এ গভর্নর।
অর্থসূচক/এমএইচ/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.