ঘূর্ণিঝড় হামুনের আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, মৃত্যু ৩

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুনের বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করেছে। এটি দুর্বল হয়ে স্থল গভীর নিম্নচাপের আকারে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া হয়ে মিয়ানমারের দিকে চলে গেছে। যদিও হামুনের আঘাতে কক্সবাজারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি এলাকাগুলোতে বাতাসের তীব্রতা ছিল খুব বেশি। ঝড়ের কবলে পড়ে কক্সবাজারে ইতোমধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া অসংখ্য ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে আরেকজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, শহরের পাহাড়তলীতে দেয়ালচাপায় আব্দুল খালেক নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর মহেশখালীতে মাটিচাপায় হারাধন নামে আরেকজন মারা গেছেন। এ ছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নে আজগর আলী নামে একজন গাছচাপা পড়ে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া দেয়ালচাপা ও গাছপালা পড়ে আরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

এদিকে কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়ক, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরসহ অনেক এলাকায় ঝড়ের আঘাতে গাছ উপড়ে পড়ে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। সন্ধ্যার পর থেকে কক্সবাজার শহর ও আশেপাশের এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় হামুনে সৃষ্ট ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে জেলায় কাঁচা ঘরবাড়ি এবং গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়া পাড়াসহ জেলার উপকূলীয় এলাকায় ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’

বুধবার (২৫ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় হামুন গতকাল মঙ্গলবার দিনগত রাত ১টার দিকে কুতুবদিয়া অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে। এটি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া হয়ে মিয়ানমারের দিকে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য এটি এখন গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। হামুন ঘূর্ণিঝড় পর্যায়ে থেকেই উপকূল অতিক্রম করেছে। এখন বাংলাদেশের জন্য কোনো আশঙ্কা নেই। এর প্রভাবে চট্টগ্রামে গতকাল সন্ধ্যা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছি। হাতিয়া, সন্দ্বীপ, বান্দরনবান, খাগড়াছড়ি, টেকনাফসহ বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। এর প্রভাবে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট আমরা পাইনি।’

ঘূর্ণিঝড় হামুন নিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ ১৫ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় হামুন উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার দিনগত রাত ১টায় উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করেছে এবং দুর্বল হয়ে সাতকানিয়া, চট্টগ্রামে স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে অবস্থান করছে। এটি স্থলভাগের অভ্যন্তরে আরও অগ্রসর ও বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে পারে।’

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উপকূলের নৌযান এবং মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলের নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.