ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী চলবে এই ব্যাংক। সব সেবাই হবে অ্যাপ-নির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে। স্থাপনাবিহীন এ ব্যাংক পরিচালনার জন্য থাকবে প্রধান কার্যালয়। ব্যাংকিং খাতে অর্থ স্থানান্তরসহ নানা বিষয়ে অনলাইন সুবিধা পাওয়া গেলেও অনেক কিছুই এখনো চলে ম্যানুয়ালি। দেশের ব্যাংক খাতে আগে থেকেই আস্থার সংকট রয়েছে। নতুন করে যাদের ডিজিটাল ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাদের রেপুটেশনও ভালো না। এর ফলে ডিজিটাল ব্যাংকে আস্থার সংকট থাকবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার ছাত্র-ছাত্রী সহ অনেকে ডিজিটালি ব্যাংক খাত এগিয়ে যাওয়ার আশা প্রকাশ করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক আটটি প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ব্যাংকের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে লেটার অব ইনটেন্ট বা সম্মতিপত্র (এলওআই) দেওয়া হয়েছে নগদ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসি ও কড়ি ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসিকে।
রোববার (২২ অক্টোবর) গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় নতুন ডিজিটাল ব্যাংক অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
ইতিমধ্যে যেসব প্রতিষ্ঠানকে ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে সম্মতিপত্র দেওয়া হয়েছে তাদের রেপুটেশন ভালো না বলে মন্তব্য করেছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। তিনি অর্থসূচককে বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ব্যাংক গঠন করবে তাদেরকে দেখাশুনা করার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। তাই যাদেরকে অনুমোদন দেওয়া হবে তাদের বিষয়ে অনেক বেশি পর্যালোচনা করা দরকার। ইতিমধ্যে যে দুটি প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণাঙ্গ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তাদের রেপুটেশন ভালো না।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ ব্যাংক ও ডিজিটাল ব্যাংক সম্পূর্ণ আলাদা। ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে কেন উইং খুলে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে তা আমার বোধগম্য নয়। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্যও ব্যাংকের মতো সবকিছু আলাদা হওয়া দরকার ছিলো। তবে ডিজিটাল ব্যাংক টিকিয়ে রাখতে হলে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। বিকাশ ও নগদের অ্যাপ এখন সবার হাতে রয়েছে। তাদের জন্য কার্যক্রম পরিচালনা করা সহজ হবে।
গুলিস্তানের খুচরা জামা-কাপড় ব্যবসায়ী নাসের শেখ নানা ধরনের পোশাক কিনে আনেন চকবাজার থেকে। তিনি ‘ডিজিটাল ব্যাংক’ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অর্থসূচককে তিনি বলেন, আমি নিজে মার্কেটে গিয়ে পোশাক কিনে এনে এখানে বিক্রি করি। এসব পণ্যের মূল্য নগদ টাকায় দিয়ে আসি। মাঝেমধ্যে দোকান থেকে বিকাশে গ্রামে টাকা পাঠাই।
অন্যদিকে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তারিক আহমেদ মনে করেন, বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অনেক কাজকে সহজ করেছে। এখন ভার্সিটির সেশন ফি সহ অনেক কিছুর পেমেন্ট অনলাইন ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে করা যাচ্ছে। ডিজিটাল ব্যাংকের কার্যক্রম চালু হলে লেনদেন আরও ত্বরান্বিত হবে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার এখনো অনেক ব্যয়সাপেক্ষ এবং গতি কম। অনেক খাতই এখনো ডিজিটাল হয়নি। ব্যাংকিং খাতে অর্থ স্থানান্তরসহ নানা বিষয়ে অনলাইন সুবিধা পাওয়া গেলেও অনেক কিছুই এখনো চলে ম্যানুয়ালি। এখনো অধিকাংশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ঘরে বসে খোলা যায় না। অনেক খাতই আংশিক ডিজিটাল।
দেশকে ডিজিটাল করার প্রক্রিয়ায় আধা-সরকারি ও বেসরকারি খাতও ভূমিকা রাখছে। অললাইন ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স, অনলাইন শপিং বাংলাদেশে দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন, ফল, ভর্তি সব কিছুই অনলাইনে হচ্ছে। বাংলাদেশে এখন অনলাইন চিকিৎসা পরামর্শ, টেলিমেডিসিন, চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা জনপ্রিয় হচ্ছে। এখন দেশে বসেই দেশের বাইরের চিকিৎসকের সঙ্গে অনলাইনে পরামর্শ নেয়া যায়।
এদিকে চলতি বছরের আগস্ট মাস শেষে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ১৯ লাখে। এর মধ্যে ৯০ দশমিক ৭৯ শতাংশ মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৯৭ লাখ। মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কারণে টানা সাত মাস ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থসূচক/সুলাইমান



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.