নাগর্নো-কারাবাখে ফের সংঘর্ষ

আবার উত্তপ্ত নাগর্নো কারাবাখ। সেখানে কামান-সহ সেনা পাঠালো আজারবাইজান। তাদের দাবি, ইতিমধ্যেই এই অভিযানের ফলে ছয়জন আর্মেনিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী মারা গেছে।

আজারবাইজান জানিয়েছে, আর্মেনিয়ার মদতপুষ্ট জঙ্গিরা এই অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পন করলে তবেই শান্তি আসবে। এখানকার সরকারকেও পদত্যাগ করতে হবে।

আর নাগর্নো-কারাবাখের স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, মোট ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে তীব্র লড়াই শুরু হয়েছে। এর মধ্যে দুইজন বেসামরিক মানুষ মারা গেছেন বলে জানানো হয়েছে। আজারবাইজানের সেনা আক্রমণ করার পর ছয়টি গ্রাম খালি করে দেয়া হয়। গোলাগুলির আঘাতে ১৩৮ জন আহত হয়েছেন।

আজারবাইজানের দাবি, এখানে আর্মেনিয়ার সমর্থনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সরকার চলছে। সেই সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, সর্বশেষ লড়াইয়ের দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিতে হবে। বারবার করে বলা সত্ত্বেও তারা কিছুই করেনি।

আজারবাইজান বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, তারা এই অভিযান তখনই থামাবে, যখন সব বিচ্ছিন্নতাবাদী অস্ত্র ফেলে দিয়ে আত্মসমর্পন করবে। এই অঞ্চলের প্রশাসনকে ভেঙে দিতে হবে। আর্মেনিয়ার সেনাবাহিনীর যে সব সদস্য বেআইনিভাবে এই এলাকায় আছে, তাদের চলে যতে হবে বা লড়াই ছাড়তে হবে। নাহলে অভিযান শেষ পর্যন্ত চলবে।

আজারবাইজান জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হবে না। তাদের লক্ষ্য শুধু বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। কারাবাখ অঞ্চলে যে আর্মেনীয়রা আছেন, তাদের আজারবাইজান রক্ষা করবে।

এদিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সংঘর্ষবিরতি চেয়েছে। তারা জানিয়েছে, তারা আজারবাইজানের সঙ্গে আলোচনায় রাজি। কিন্তু তার জন্য এই অভিযান বন্ধ করতে হবে।

আজারবাইজানের সামরিক অভিযান শুরুর খবর আসার পরই আর্মেনিয়ায় বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রচুর মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন।

টিভির রিপোর্টে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছে। কারণ, বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে সরকারি ভবনগুলির দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।

বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, প্রধানমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতে হবে। আর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাকে সরাবার জন্য অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছিল।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী নাগর্নো-কারাবাখের আর্মেনীয় প্রধান এলাকা থেকে সাধারণ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। মঙ্গলবার সারাদিনে ১৮৫ শিশু-সহ ৪৬৯ জনকে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওযা হয়েছে।

বলা হয়েছে, রাশিয়ার বাহিনী আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছে।

আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে ২০২০ সালের শান্তিচুক্তি রক্ষিত হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য দুই হাজার রাশিয়ার সেনা সেখানে আছে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, নাগর্নো কারাবাখে অবিলম্বে রক্তপাত বন্ধ করতে হবে। দুই পক্ষই যেন সংঘর্ষ বন্ধ করে। সাধারণ মানুষ যেন হতাহত না হয়।

রাশিয়ার সঙ্গে আর্মেনিয়ার সম্পর্ক এখন ভালো নয়। সেই সময় এই সংঘাত শুরু হলো।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন জানিয়েছেন, তিনি আজারবাইজানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাকে অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ রাখতে বলেছেন ব্লিংকেন। তিনি জানিয়েছেন, বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে হবে। তাই উত্তেজনা কমাতে হবে।

জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেয়ারবক দাবি করেছেন, আজারবাইজানকে অবিলম্বে সামরিক অভিযান বন্ধ করতে হবে। বেয়ারবক বলেছেন, আজারবাইজান প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে। এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো সাধারণ মানুষকে বাঁচানো। বার্লিন মনে করে, শান্তি আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জাতিসংঘের সাধারণ সভার বৈঠকে বলেছেন, নাগর্নো কারাবাখ হলো আজারবাইজানের অংশ। সেখানে আঞ্চলিক সংহতি রক্ষা করতে যে কোনো অভিযানের অধিকার আজারবাইজানের আছে। সূত্র: ডিডাব্লিউ, এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.