সড়ককে অনাকাঙ্খিত মৃত্যু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জীবনে ও পরিবারে গতির ছন্দপতন ঘটায়, সার্বিকভাবে উৎপাদনশীলতা ও অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা যায়, রোড ক্রাশে মৃত্যুর বেশিরভাগই শিশু ও তরুন, যারা দেশের সম্ভামনাময় এবং কর্মক্ষম অংশ। যারা দেশের জন্য আরও অবদান রাখতে পারে। তাই রোড ক্রাশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ডিএনসিসি আওতাধীন সড়ক নিরাপদ করতে কাজ করে যাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকালে নগর ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সাংবাদিকতা কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম এ কথা বলেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি এবং জনস্বাস্থ্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈশ্বিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস যৌথভাবে এ কর্মশালা আয়োজন করে। এতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমের ২৫ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র আরও বলেন, ঢাকা উত্তরের সড়কে পথচারীদের প্রাধান্য দেয়া হবে। এজন্য ফুটপাথ প্রশস্ত, নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় করা, ফুটপাথ হতে নির্মাণ সামগ্রী ও অবৈধ দোকান উচ্ছেদ এবং হকারদের সুষ্ঠূ ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা হচ্ছে। রাস্তা পারাপারে পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং বা পদচারী সেতুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি ডিএনসিসি’র সেবা গ্রহণকারী নাগরিক ও সেবা প্রদানকারী সরকারি সংস্থাগুলোকে ফুটপাথ ও সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে বিরত থাকার আহবান জানান। মেয়র বলেন, নাগরিক সেবা প্রদানকারী কোন সংস্থা কর্তৃক জরুরি প্রয়োজনে ফুটপাথ ও সড়ক কাটার প্রয়োজন হলে অবশ্যই ডিএনসিসি-কে অবহিত ও প্রয়োজনীয় অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, সড়কের সমস্যা সমাধানে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন। সকল গণমাধ্যমে ট্রাফিক আইন ও রোড ক্রাশ নিয়ে প্রচারণা কর্মসূচি পরিচালনা করা প্রয়োজন। ডিএনসিসি’র পক্ষ থেকে সিগনালে গাড়ি থামানো ও আইন মেনে চলা, পথচারীদের সড়ক পারাপারে সহায়তা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ইত্যাদি বিষয়ে প্রচারণার উদ্যোগ নেয়া হবে। বিশেষ করে, সিগনালগুলোতে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে। ডিজিটাল স্ক্রিনগুলোতে প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহঃ আমিরুল ইসলাম, পিএসসি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে নিয়োজিত বৈশ্বিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস’র টেকনিক্যাল এডভাইজর – রোড সেফটি আমিনুল ইসলাম সুজন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন, বিগআরএস’র ঢাকা নর্থ’র কো অর্ডিনেটর মো: আবদুল ওয়াদুদ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডিএনসিসির –বিগআরএস প্রোগ্রামের কনসালটেন্ট (কমিউনিকেশন অফিসার) এবং সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সাংবাদিকতা কর্মশালারটির সমন্বয়কারী খালেদা জেসমিন মিথিলা।
সকালে কর্মশালাটির উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা বলেন, ডিএনসিসি’র একার পক্ষে সড়ক নিরাপদ করা সম্ভব নয়। শহরের সড়ক সমূহকে নিরাপদ এবং টেকসই করার জন্য সকল নাগরিকের সহযোগিতা প্রয়োজন। সড়কে সকলে ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলুন। মোটর সাইকেল ও বাইসাইকেলে হেলমেট পরুন। ব্যক্তিগত গাড়িতে সিটবেল্ট ব্যবহার করুন। গাড়ী চালকদের প্রতি অনুরোধ, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালাবেন না, পথচারী এবং সাইকেল আরোহীদের অধিকারকে সম্মান করুন এবং শহরে গাড়ির গতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। আসুন, আমরা সবাই নিরাপদ, সহজগম্য ও আনন্দদায়ক সড়ক ব্যবস্থা তৈরিতে একসাথে কাজ করি।
কর্মশালায় সড়ক নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও বৈশ্বিকভাবে গৃহীত নিরাপদ ব্যবস্থাসমূহ (সেফ সিস্টেম এপ্রোচ) বিষয়ে আলোচনা করেন ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস এন্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ’র গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ (জিআরএসপি) বৈশ্বিক সড়ক নিরাপত্তা এডভোকেসি ও গ্র্যান্ট প্রোগ্রামের ব্যবস্থাপক তাইফুর রহমান, জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্যোগ ও সমীক্ষা বিষয়ে আলোচনা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ’র ন্যাশনাল কনসালটেন্ট ডাঃ ওয়াটিন আলম, নিরাপদ সড়ক ডিজাইন বিষয়ে আলোচনা করেন ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনিশিয়েটিভের (ডব্লিউআরআই) বাংলাদেশ পরামর্শক ফারজানা আক্তার তমা এবং সড়ক নিরাপত্তা সাংবাদিকতা বিষয়ে আলোচনা করেন নাগরিক টিভির প্রধান প্রতিবেদন শাহনাজ শারমিন।
অর্থসূচক/ এইচএআই



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.