ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর হার

কিছুদিনের মধ্যেই ন্যাটোয় আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেবে ফিনল্যান্ড। তার ঠিক আগে হেরে গেলেন ফিনল্যান্ডের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট প্রধানমন্ত্রী। এতদিন সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা ফিনল্যান্ডের শাসক দল ছিল। সান্না মারিন মাত্র ৩৪ বছর বয়সে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ২০১৯ সালে৷ কিন্তু দ্বিতীয়বার গদিতে ফেরা হলো না তার।

সোমবার সকাল পর্যন্ত ফিনল্যান্ডের ভোটের যে ফলাফল মিলেছে, তাতে সান্নার দল তৃতীয় স্থানে আছে। তবে বিজয়ী দলের সঙ্গে তাদের ভোটের তফাত খুব বেশি নয়। সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে সেন্টার রাইট ন্যাশনাল কোয়ালিশন। দ্বিতীয় স্থানে দক্ষিণপন্থি ফিনস পার্টি। ন্যাশনাল কোয়ালিশন পেয়েছে ২০ দশমিক আট শতাংশ ভোট। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটেরা পেয়েছে ১৯ দশমিক নয় শতাংশ ভোট। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফিনস পার্টি পেয়েছে ২০ দশমিক এক শতাংশ ভোট।

কোনো দলই সেই অর্থে সরকার গঠনের জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। ফিনল্যান্ডে উপস্থিত ডিডাব্লিউয়ের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, খাতায় কলমে সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করতে পারে ন্যাশনাল কোয়ালিশন। কিন্তু ভোটের আগে একাধিক বিষয় নিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছিল। সেই বিষয়গুলিকে সামনে রেখেই ভোট হয়েছে। ফলে ভোটের পর এই দুই দলের পক্ষে জোটতৈরি করে সরকার গঠন করা মুশকিল।

তবে অপেক্ষাকৃত কম ভোট পাওয়া আরো বেশ কয়েকটি ছোট ছোট দলকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে ন্যাশনাল কোয়ালিশন। যদিও তাদের পক্ষ থেকে এখনো তেমন কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি।

নিয়ম অনুযায়ী, সংসদে আটটি প্রধান দলের মধ্যে সবচেয়ে বড় দল সরকার গঠনের প্রথম সুযোগ পায় এবং ১৯৯০ সাল থেকে সেই দলটি সবসময় প্রধানমন্ত্রিত্বের পদের দাবি করে আসছে৷

শাসক দলের প্রধানমন্ত্রী অবশ্য হার স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। তিনি হার মেনে নিচ্ছেন। বস্তুত, তার হাত ধরেই ফিনল্যান্ড ন্যাটোয় যোগ দিতে চলেছে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর ফিনল্যান্ডের আইনসভা ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেয়। ৩০ সদস্যের ন্যাটোয় ফিনল্যান্ডের সঙ্গে সুইডেনও যোগ দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করে। বস্তুত, ফিনল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার প্রায় তেরশ কিলোমিটার সীমান্ত। সে কারণেই তারা এত মরিয়া হয়ে উঠেছে। সুইডেন এখনো সব দেশের থেকে সবুজ সংকেত না পেলেও সম্প্রতি তুরস্কের ভোট পেয়ে ফিনল্যান্ড এখন ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার জন্য তৈরি।

এর আগে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে রেকর্ড তৈরি করে ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন সান্না মারিন। এ বছর দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য লড়ছিলেন তিনি। প্রচারে একাধিকবার ন্যাটোর প্রসঙ্গ তুলেছেন তিনি। কিন্তু শেষপর্যন্ত তার ন্যাটো প্রস্তাব ফিনল্যান্ডের মানুষের উপর ততটা প্রভাব ফেলেনি বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ভয়াবহ লেবার বা মজুরের অভাবই এমন ফলাফলের কারণ।

ফিনল্যান্ডের ঋণ ও জিডিপি অনুপাত ২০১৯ সালে ৬৪ শতাংশ থেকে ৭৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা অর্পোর ন্যাশনাল কোয়ালিশন ৬০০ কোটি ইউরো খরচ কমিয়ে সমাধান করতে চায়৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, রয়টার্স, এপি, এএফপি

অর্থসূচক/এএইচআর

  
    

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.