উন্নত কাজের পরিবেশ ও ভালো বেতনকাঠামোর ফলে ব্যাংকের চাকরিতে মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়। এর ফলে ব্যাংক খাতে নারীদের অংশগ্রহণ ব্যাপকহারে বাড়ছে। শুধু চাকরিই নয়, দায়িত্বশীল পদে বসে নীতিনির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন নারীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের জুন শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট নারী কর্মকর্তার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ হাজার ৫৪৮ জন, যা মোট খাতের ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০২১ সালের একই সময়ে ব্যাংক খাতে ২৯ হাজার ৫১৩ জন নারী অংশগ্রহণ করেছিলো।
আলোচিত সময়ে দেশে নারী কর্মকর্তাদের সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ ছিলো বিদেশি ব্যাংকগুলোতে। এসব ব্যাংকে নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো ২৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এরপরে অংশগ্রহণে এগিয়ে ছিলো বেসরকারি বাণিজ্য ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংকে নারীদের অংশগ্রহণ ১৯ দশমিক ২১ শতাংশ। রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর নারীদের অংশগ্রহণ ছিলো যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও ১৪ দশমিক ২৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এসডিজির ১৭টি লক্ষ্য। এর মধ্যে লিঙ্গ সমতা পঞ্চম লক্ষ্য। বাংলাদেশ এ লক্ষমাত্রা অর্জনে এবং সকল ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। লিঙ্গ সমতা লক্ষ্য অর্জনে ৯টি টার্গেটে নারী এবং মেয়েদের প্রতি সব ধরণের অসমতা, হিংস্রতা দূরীকরণ, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সমাজের সকল ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে নারীদের পূর্ণ এবং কার্যকর অংশগ্রহণের উল্লেখ থাকায় সরকারি-বেসরকারিভাবে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে।
জানা যায়, ব্যাংকে ব্যবস্থাপনার মধ্যম স্তরে নারীদের অংশগ্রহণ ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ নারী ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ২০২১ সালের একই সময়ে মধ্যম স্তরের নেতৃত্বে নারীর অংশহণ ছিলো ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ ও উচ্চপর্যায়ে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। সেই হিসাবে প্রতি বছরই ব্যাংক খাতে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব বাড়ছে।
তথ্য অনুযায়ী, নারীদের জন্য দেশের তফসিলি ব্যাংকে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি কার্যকর হচ্ছে। এসব ব্যাংকে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে নীতিমালাও আছে। পাশাপাশি ৪৭টি ব্যাংক নিয়মিতভাবে লিঙ্গসমতা বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে প্রশিক্ষণের আয়োজন করছে। ৩২টি তফসিলি ব্যাংক তাদের কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র স্থাপন করেছে। এছাড়া নারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ৩১টি ব্যাংকের আছে নিজস্ব পরিবহনসুবিধা।
ব্যাংকের পর্যাপ্ত শিশু দিবাযত্নকেন্দ্র ও যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকলে নারী ব্যাংকারের সংখ্যা আরও বাড়ত। শীর্ষ পর্যায়ের অনেক পদে নারী কর্মকর্তাদের দেখা যেত। একইসঙ্গে নারী ব্যাংকারদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের ব্যবস্থা থাকলে নারীরা সহজেই ব্যাংক ছেড়ে যেতেন না বলে মনে করছেন বেশ কয়েকজন নারী ব্যাংকার।
অর্থসূচক/এমএইচ



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.