নতুন যোদ্ধা হিসেবে যখন কিংবদন্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মাঠে নামেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিকি হ্যালি, তখন বিষয়টিতে অন্যরকম চমক আসে। যখন সাউথ ক্যারোলিনার সাবেক গভর্নর ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিয়োগ দেওয়া রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিলেন তখন বিষয়টি উপভোগ্যও বটে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন নিকি হ্যালি। এর আগে ২০২৪ সালে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিকি হ্যালি প্রথম রিপাবলিকান যিনি একই দলের হয়ে তার সাবেক নিয়োগ কর্তা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন।
অনেক আগে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় আটঘাট বেধে প্রচারণার মাঠে নামছেন নিকি হ্যালি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তার প্রার্থীতা ঘোষণার কারণে রিপাবলিকান দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা বেরিয়ে আসতে পারে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হবেন। কেননা তার প্রতিযোগীর পাল্লা আরও ভারী হচ্ছে। সাবেক মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স, সিআইএ পরিচালক মাইক পম্পেও উভয়ই প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন। যদিও এখনো ঘোষণা আসেনি। সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি তার ‘ব্লুপ্রিন্ট ফর আমেরিকা’স রিভাইভ্যাল’ প্রকাশ করবেন।
একটি জনাকীর্ণ মাঠ ট্রাম্পের জন্য উপযুক্ত যেটি তাকে ২০১৬ সালে তার দলের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছিল। সে সময় সন্দেহ নেই কেন তিনি বলেছিলেন, হ্যালির ‘অবশ্যই দৌড়ানো উচিত।’
নিকি হ্যালি ট্রাম্পের সঙ্গে মেলামেশা করে বিব্রত হয়েছেন বিভিন্ন ইস্যুতে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে হঠাৎই দায়িত্ব ছেড়ে দেন। ভারতীয় অভিবাসীদের কন্যা, তিনি ট্রাম্পের বিদেশিদের প্রতি বিতৃষ্ণা এবং নারীদের প্রতি অসম্মান ইস্যুও তুলে ধরেন। অক্টোবরে প্রকাশিত তার নিজের বইতে, হ্যালি নিজেকে ব্রিটেনের ঠান্ডা যুদ্ধের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তুলনা করেন।
ট্রাম্প যখন দাবি করেন জো বাইডেন ২০২০সালের নির্বাচনে কারচুপি করেছেন, তখন নীরব ছিলেন নিকি। ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটাল হিলে হামলা করার আগ পর্যন্ত নিকি হ্যালি বলেছিলেন, ট্রাম্প যদি আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে তিনি তাকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন না। কিন্তু পরে তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন ‘আমি চাই না আমরা ট্রাম্পের আগের দিনগুলোতে ফিরে যাই।’
সর্বশেষ ইউগভ/ইয়াহু জরিপ দেখায় মাত্র ৫ শতাংশ রিপাবলিকান ভোটার তাকে দলের মনোনয়নের জন্য সমর্থন করবে। ট্রাম্প এবং ডিস্যান্টিস যথাক্রমে ৩৭ শতাংশ এবং ৩৫ শতাংশ ভোট নিয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন। ডিস্যান্টিস অন্তত নিজের সাফল্যের গল্প বলা থেকে উপকৃত হবেন। কেননা তার অধীনে ফ্লোরিডা ফুলেফেঁপে উঠছে। তিনি একজন প্রমাণিত ভোট জয়ী নেতা।
আইওয়া থেকে ট্রাম্প অনায়াসে মনোনয়ন আশা করেছিলেন তা পাবেন না। মধ্যবর্তী নির্বাচনে ট্রাম্প-সমর্থিত প্রার্থীদের দুর্বল পারফরম্যান্স ইঙ্গিত দেয় ভোটাররা আর তার প্রতি মুগ্ধ নয়। ডিস্যান্টিসের ভোটে চিত্তাকর্ষক প্রাথমিক শক্তি, যিনি গণতন্ত্রের জন্য এমন হুমকি না দেখিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্টের অনেক আইডিয়া ভাগ করেছেন।
প্রতিযোগিতা যত বেশি জমজমাট হবে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো যেকোনো একক প্রতিদ্বন্দ্বীর, ডিস্যান্টিস বা অন্য কেউই হোক না কেন তার জন্য কঠিন হবে। ট্রাম্প যদি মনোনয়ন পান তবে অনেকে আশঙ্কা করছেন, বাইডেন তাকে আবার পরাজিত করতে পারেন।
রিপাবলিকান দলের সবচেয়ে ধনী দাতারা তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিদের চেয়ে ট্রাম্পকে একঘরে করার ইচ্ছাপোষণ করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কোচ নেটওয়ার্ক তাকে সমর্থন করার পরিকল্পনা করছে না। ব্ল্যাকস্টোনের সিইও, স্টিভ শোয়ার্জম্যান এবং ইন্টারেক্টিভ ব্রোকারসের প্রতিষ্ঠাতা, থমাস পিটারফি, যাদের সম্পদের মূল্য প্রায় ৬০ বিলিয়ন, তারাও তাকে নিয়ে ক্লান্ত। কেন গ্রিফিন, সিটাডেলের বস, যিনি মধ্যবর্তী প্রার্থীদের জন্য ১০০ মিলিয়ন দিয়েছেন, তিনিও ডিস্যান্টিসকে সমর্থন করেছেন।
২০১৭ সালে হ্যালি বলেছিলেন তিনি ‘হিল পরেন ফ্যাশনের জন্য নয়’, যাতে তিনি কিছু ভুল দেখলে ‘প্রতিবার তাদের লাথি মারতে পারেন’ সেকারণে। এরপর থেকে রিপাবলিকান পার্টিতে অনেক সমস্যা হয়েছে। তবে হ্যালি এবং তার অনেক সহকর্মী এখন সেখান থেকে সরে এসেছেন।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.