কক্সবাজারে সংরক্ষিত বনে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) “টেকনিক্যাল সেন্টার” নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল এবং কক্সবাজারের বনভূমি রক্ষার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
বুধবার (২০ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ১১টি সংগঠনের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন গ্রিন কক্সবাজার সংগঠনের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের বনভূমি রক্ষায় রয়েছে সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি। রয়েছে আইন, নীতি,আদালতের নির্দেশ ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্দোবস্তযোগ্য পতিত জমি ও অকৃষি খাস জমি থাকা সত্ত্বেও কেন বারবার চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বনভূমিকে উন্নয়নের নামে বনবিরুদ্ধ ব্যবহারের জন্য বেছে নেওয়া হচ্ছে, তা বোধগম্য নয়।
সভাপতির বক্তব্যে সমাজকর্মী খুশী কবির বলেন, কক্সবাজারের বনভূমির সঙ্গে শুধু গাছপালা নয়, অন্যান্য বন্যপ্রাণী, বায়ুদূষণ, পরিবেশ দূষণের মত বিষয়গুলো জড়িত। আমরাও ফুটবলের উন্নয়ন চাই। তবে সেটা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ বিনষ্ট করে নয়।
সংবাদ সম্মেলনে নাগরিক আন্দোলন নেতা ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বনকে টিকিয়ে রাখাই বড় উন্নয়ন। পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোনো রাজধানী নেই যেখানে ৫টি নদী আছে. ঢাকায় আছে৷ এই ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থাকেন৷ তবুও, এই নদীগুলোকে আমরা পরিশোধন করতে পারছি না। আমরা দুর্ভাগা যে আমরা বনভূমি তথা এ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা করতে পারিনি। কক্সবাজারের বায়ুদূষণ অন্যান্য সব জায়গার চেয়ে বর্তমানে বেশি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বন ও পরিবেশ রক্ষা সরকারের একটি পবিত্র দায়িত্ব। যেন-তেনভাবে যখন বন বরাদ্দ করা হয়, সেটি তো সংবিধানেরও লঙ্ঘন। এমন তো না যে, কক্সবাজার ছাড়া আর কোনো জায়গায় সরকারি জমি নেই।
ফুটবলের যে মৌলিক নীতি, ‘ফেয়ার প্লে’ সেটিও তো বাফুফে লঙ্গন করছে। বাফুফে ফিফার দোহাই দিচ্ছেন। ফিফা তো পরিবেশ ধ্বংস করে সেন্টার নির্মাণের নির্দেশ দেয়নি। বলতে চাই, বাফুফের সেন্টার নির্মাণের অনুমোদনের পর ফিফা’র অর্থায়ন বন্ধের মতো বিব্রতকর পরিস্থিতির কথা তারা মাথায় রাখবে। আমরা সেটি মনে রাখার কথা বলবো।
র্যামন ম্যাগসেস পুরস্কারপ্রাপ্ত বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, কক্সবাজারের বনটা হলো একটা প্রাকৃতিক বন। আপনি সেটি ধ্বংস করলে আর তৈরি করতে পারবেন না। তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আপনি কি রেখে যাচ্ছেন? ইতোমধ্যেই দেখা গেছে, অন্যান্য জেলার তুলনায় ঢাকার তাপমাত্রা এর আশপাশের জেলাগুলোর তুলনায় দুই ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধুমাত্র সবুজ না থাকার কারণে। আমরা এমনিতেও ২৫ শতাংশ বনভূমির যে মৌলিক শর্ত তার ধারেকাছেও নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, আসকের প্রধান নির্বাহী গোলাম মনোয়ার, এএলআরডির উপ-প্রধান নির্বাহী রওশন জাহান মনি, ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এসএম রেজাউল করিম, ইয়েস এর প্রধান নির্বাহী ইব্রাহীম খলিল মামুন, কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সেইভ দ্যা কক্সবাজারের সভাপতি আনছার হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অর্থসূচক/এমএস



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.