লুহানস্কের গভর্নর জানিয়েছেন, বিশাল পরিমাণ রাশিয়ার সৈন্যরা ইউক্রেনের সিভিয়ারোদনেস্ক শহরটি ঘিরে ফেলেছে। লাগাতার শহরের ভিতর বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে। শুধু সামরিক কাঠামো নয়, বেসামরিক বাড়ির উপরেও গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত দুই বেসামরিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, রাশিয়ার সেনা ক্রমশ শহরের ভিতরে ঢুকে পড়ছে। এই শহরটিও তারা দখল করে নিয়েছে। এর আগে এই অঞ্চলে আরো বেশ কিছু এলাকা রাশিয়া দখল করে নিয়েছিল। তবে এই শহরটির প্রতিবেশী অঞ্চলগুলি এখনো ইউক্রেনের দখলে আছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর। সেখান থেকে বেসামরিক মানুষদের দ্রুত অন্যত্র পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে ইউক্রেনের এই পরিস্থিতির জন্য জার্মানি এবং হাঙ্গেরিকে দায়ী করেছেন তিনি। তার বক্তব্য, তারা সময় মতো অস্ত্র সরবরাহ করলে তাদের এভাবে রাশিয়ার হাতে নিজেদের শহর ছেড়ে দিতে হতো না।
দোনবাসের লুহানস্ক অঞ্চলের সেভেরোদভিনস্কই সবচেয়ে বড় শহর, যার কিছু অংশ কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গভর্নর হাইদাই বলেন, পার্শ্ববর্তী লিসিচানস্ক শহর এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে। দুই শহরের মধ্যকার মূল সড়কে গোলাবর্ষণ করা হচ্ছে। তবে সড়কটি এখনো বন্ধ হয়ে যায়নি। সেভেরোদভিনস্কে গ্যাস ও পানি নেই। এই পরিষেবা চালুর কোনো সম্ভাবনাও নেই। লুহানস্ক অঞ্চলের ১০ লাখ মানুষকে পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সভায় সোমবার ভিডিও বক্তৃতা দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তার বক্তৃতা দিয়েই এদিনের অধিবেশন শুরু হয়েছে। সেখানে ইউরোপীয় নেতাদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। তার বক্তব্য, ইউরোপ যদি ঐক্যবদ্ধভাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, রাশিয়া তাহলে তা নিজেদের জয় হিসেবে দেখবে।
বস্তুত, রাশিয়ার বিরুদ্ধে এখনো পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধভাবেই ব্যবস্থা নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। কিন্তু ষষ্ঠ নিষেধাজ্ঞার প্যাকেজ নিয়ে মতানৈক্য শুরু হয়েছে। এই প্যাকেজেই তেলের উপর এমবার্গো বা নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হয়েছে। হাঙ্গেরির নেতৃত্বে স্লোভাকিয়া, চেক রিপাবলিক, বুলগেরিয়ার মতো দেশগুলো ওই নিষেধাজ্ঞা মানতে রাজি হচ্ছে না। জেলেনস্কির বক্তব্য, এখন নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাশিয়ার উপর ইউরোপের চাপ দেওয়ার সময়। কিন্তু ইউরোপ যদি নিজেরাই ঐক্যবদ্ধ হতে না পারে, তাহলে রাশিয়া তা জয় হিসেবে ধরে নেবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দোনবাসের দুই অঞ্চল অর্থাৎ লুহানস্ক ও দোনেস্ক-কে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দোনবাস অঞ্চলের বড় অংশ আগে থেকেই রুশ- সমর্থিত স্বাধীনতাকামীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
এদিকে জর্জিয়ার অন্তর্গত দক্ষিণ ওসেটিয়া অনেকদিন আগেই নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। বস্তুত, ২০০৮ সালে জর্জিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধে ওসেটিয়া নিজেদের স্বাধীন বলে ঘোষণা করে এবং রাশিয়া তাদের স্বাধীনতা স্বীকার করে। জর্জিয়া অবশ্য ওসেটিয়ার স্বাধীনতা স্বীকার করেনি।
সম্প্রতি সেই দক্ষিণ ওসেটিয়ায় গণভোট হওয়ার কথা ছিল। তারা রাশিয়ার অংশ হবে কি না, তা নিয়ে ভোট হওয়ার কথা ছিল। প্রাথমিকভাবে মে মাসে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই ভোট যিনি ঘোষণা করেছিলেন, কিছুদিন আগে তাকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়। বর্তমান নেতা ভোট পিছিয়ে দিয়ে জুলাই মাসে করেছিলেন। কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠেছে আদৌ ভোট হবে কি না তাই নিয়ে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে গোটা বিশ্ব এতরকম ব্যবস্থা নিচ্ছে যে, এই পরিস্থিতিতে তারা গণভোটে যাবে কি না এবং রাশিয়ার অন্তর্গত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আপাতত সেখানে ভোট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। সূত্র: রয়টার্স, এপি, এএফপি, পার্সটুডে
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.