ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির একজন উপদেষ্টা ওলেক্সেই আরেস্টোভিচ বলছেন, মারিউপোল শহরের আযভস্টাল নামের যে বিশাল ইস্পাত কারখানাটি এখন ইউক্রেনীয় প্রতিরোধের শেষ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে – সেটিতে ঢোকার প্রচেষ্টা আবার শুরু করেছে রুশ বাহিনী। এটির ওপর কয়েকটি বিমান হামলাও চালানো হয়েছে – তবে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা এখনো তাদের অবস্থান ধরে রেখেছে এবং কিছু পাল্টা আক্রমণও চালিয়েছে বলে জানান তিনি।
গত বৃহস্পতিবার রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এক প্রকাশ্য ঘোষণায় তার বাহিনীকে প্ল্যান্টটির ভেতরে না ঢুকে সেটিকে অবরোধ করতে আদেশ দিয়েছিলেন। নতুন এ আক্রমণের খবর নিশ্চিত হলে ধরে নিতে হবে যে আযভস্টালের ব্যাপারে রাশিয়ার নীতিতে আরো একবার পরিবর্তন এসেছে। এই ইস্পাত কারখানাটির ভেতরে কয়েক সপ্তাহ ধরে শত শত বেসামরিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
ইউক্রেনের আযভ রেজিমেন্ট একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যাতে দেখা যাচ্ছে নারী ও শিশুরা একটি বাংকারে লুকিয়ে আছে। শিশুদের দেখতে সুস্থ মনে হলেও তারা কয়ে কসপ্তাহ ধরে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকার পর সূর্যের আলো দেখতে চায় এবং বাড়ি যেতে চায়।
মারিউপোল থেকে বেসামরিক লোকদের বের হয়ে যাবার সুযোগ দিতে একটি মানবিক করিডোর খোলার কথা ছিল। কিন্তু এটি খুলেছে কিনা তা এখনো জানা যায়নি। এই পথগুলো খোলার জন্য আগেকার কয়েকটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
ইউক্রেনের সরকার বলছে, তারা আজ বেসামরিক লোকদের বের করে নেবার আরেকটি চেষ্টা করবে কিন্তু তারা সতর্ক করে দিয়েছে যে রুশরা হয়তো একটি পৃথক করিডোর খোলার চেষ্টা করতে পারে – যেটি দিয়ে লোকজনকে রাশিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।
ইউক্রেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ওডেসায় রাশিয়ার বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দফতর বলছে এতে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে, এবং নিহতদের মধ্যে তিনমাস বয়সী এক শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছে আরো ১৮ জন। খবর- বিবিসির
ওডেসা শহরের কর্তৃপক্ষ বলছে, দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়। তবে অন্য দুটি ক্ষেপণাস্ত্র একটি সামরিক স্থাপনায় এবং আরো দুটি কিছু আবাসিক ভবনে আঘাত করে। রাশিয়ার নৌবাহিনী এই বন্দর শহরটি অবরোধ করে রেখেছে। এর আগে ওডেসার ওপর বিচ্ছিন্নভাবে গোলাবর্ষণ করা হলেও এরকম হামলা কখনো হয়নি।
ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় লুহানস্ক অঞ্চলের গভর্নর সারবিই হাইদাই বলছেন, সেখান শহরগুলোর ওপর রুশ বাহিনী বিরামহীনভাবে গোলাবর্ষণ করছে এবং তা ক্রমশঃই আরো তীব্র হচ্ছে। ২৫ হাজার লোক অধ্যুষিত পোপসানা শহরে রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ হচ্ছে এবং এখানে দু’জন লোক নিহত হয়েছে। রুশ বাহিনী বিদ্যুতের লাইন এবং সাবস্টেশনগুলোর ওপর আঘাত হানছে। একটি পাম্পিং স্টেশনের বিদ্যুত কেন্দ্রে গোলা এসে পড়ার পর কিছু শহরে পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা ওলেক্সেই আরিস্টোভিচ বলেন, ডনবাস অঞ্চলে রুশ বাহিনী এখন স্লোভিয়ানস্ক এবং ক্রামাটরস্ক শহর দুটির ওপর আক্রমণ জোরদার করছে। দক্ষিণ দিকে জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে রাশিয়ার সৈন্যরা হুলিয়াইপোলে যুদ্ধের একটি নতুন ফ্রন্ট খোলার চেষ্টা করছে। এ ছাড়াও তারা খেরসন অঞ্চলের প্রশাসনিক সীমান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
ইউক্রেনের বুচা শহরের মেয়র আনাতোলি ফেদোরুক বলছেন, রুশ দখলদারির সময় নিহত হওয়া লোকদের মৃতদেহ সংগ্রহ করা বা মাটি খুঁড়ে বের করার কাজ এখন প্রায় শেষ হবার পথে। এ পর্যন্ত ৪১২টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি গণকবরেই একশ’র বেশি মৃতদেহ পাওয়া যায়। কিছু আগুনে পোড়া মৃতদেহ ছিল বেসামরিক লোকদের – যাদেরকে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করা হয়। মৃতদেহগুলো শনাক্ত করাটাই এখন প্রধান কাজ।
অন্যদিকে রাজধানী কিয়েভের উত্তরপূর্বে চেরনিহিভ শহরের কর্তৃপক্ষ বলছে, শহরটি রুশ বাহিনীর হাতে অবরুদ্ধ হবার পরের কয়েক সপ্তাহে ৭০০-রও বেশি বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। চেরনিহিভের সিটি কাউন্সিলের সচিব ওলেক্সান্দর লোমাকো বলেন, রুশরা এখান থেকে চলে যাবার তিন সপ্তাহ পরও এখনো নতুন কবর খোঁড়া হচ্ছে।
অর্থসূচক/এএইচআর



মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়.